অভিযুক্তদের গ্রেফতার নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কাউকে হেফাজতে নিলে কোন যুক্তিতে বা কী কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাকে বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে। আর কারণ জানাতে না পারলে বা মেনে চলতে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে গ্রেফতার অবৈধ হয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে একথা বলেছে। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, কারণ জানানোর প্রয়োজনীয়তা কোনও আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং একটি বাধ্যতামূলক সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা।
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসা মামলায় আইনের অপব্যবহার নিয়ে আদালতগুলিকে সতর্ক করল SC
সম্প্রতি গুরগাঁও পুলিশ একটি মামলায় এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল। সেই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং এন কে সিং-এর একটি বেঞ্চ গুরগাঁও পুলিশের করা গ্রেফতার বাতিল করেছে। রায় দিতে গিয়ে আদালত বলেছে, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। যদিও আদালত গ্রেফতারের কারণ জানানোর পদ্ধতি নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে শীর্ষ আদালত বলেছে, এটি লিখিতভাবে জানানো ভালো হবে। যে কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে তা প্রমাণ করার দায়িত্ব পুলিশের উপর বর্তাবে। বিচারপতি সিং আরও বলেন, ‘গ্রেফতারের কারণ লিখিতভাবে জানানোর প্রয়োজনীয়তা শুধু সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তকেই নয়, বরং তাঁর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা অভিযুক্তের মনোনীত অন্য কোনও ব্যক্তিকেও জানাতে হবে।’
আদালতের মতে, অভিযুক্তের গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে জানার অধিকার সংবিধানের ২২(১) অনুচ্ছেদ থেকে স্পষ্ট। এটি না করলে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হবে এবং রিমান্ড প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। আদালত আরও বলেছে, যে একজন পুলিশ অফিসার কোনও ব্যক্তিকে আকস্মিকভাবে একটি অপরাধের ভিত্তিতে গ্রেফতার করতে পারবেন না। সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া, অভিযুক্ত এবং হেফাজতে আটক প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে অবহিত করা মৌলিক অধিকার। আর তা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে গণ্য হবে। এটি অভিযুক্তকে তাঁর স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করারও সমান হবে। সেটা করা যাবে না। এছাড়াও, রায়ে আরও বলা হয়েছে, যখন কোনও ব্যক্তিকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে গ্রেফতারের কারণ জানানো না হয়, তখন সেটি মৌলিক অধিকারেরও লঙ্ঘন বলেই গণ্য হবে।
আদালত আরও জানিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি যে ভাষা বোঝেন সেই ভাষায় তাঁকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে। তাছাড়া, যখন ধারা ২২(১)-এর লঙ্ঘন প্রমাণিত হবে তখন আদালতের কর্তব্য হল অবিলম্বে অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া। জামিন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আইনগত বিধিনিষেধ থাকলেও এটি জামিন মঞ্জুর করার একটি ভিত্তি হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।