স্ত্রী যদি তাঁর স্বামীর সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকতে বা সংসার করতে রাজি না হন, তাহলেও তিনি তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন। একটি মামলার প্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে শীর্ষ আাদালত।
লাইভ ল-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৫ নম্বর ধারা অনুসারে, স্বামীর থেকে আলাদা থেকেও তাঁর স্ত্রী এই দাবি জানাতে পারেন। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
যে নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাবে শীর্ষ আদালত একথা বলেছে, সেটি হল - 'এমন একজন স্বামী, যিনি বৈবাহিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার দ্বারস্থ হয়ে সফল হয়েছেন, কিন্তু তাঁর স্ত্রী সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করছেন এবং স্বামীর থেকে আলাদা থাকছেন, তাহলে কি ১৯৭৩ সালের ফৌজদারি আইনের ১২৫(৪) ধারা অনুসারে, ওই স্বামী তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন?'
এই প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার (যিনি এই মামলার রায় লিখেছেন) জানান, স্ত্রী যদি বৈবাহিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি তা করতেই পারেন। কারণ, ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের ৯ নম্বর ধারা তাঁকে সেই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু, এর জন্য তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ চাওয়ার অধিকার নস্যাৎ হয়ে যায় না।
কোন মামলার প্রেক্ষিতে এই পর্যবেক্ষণ?
সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, স্বামী তাঁর স্ত্রীকে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছেন। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে গর্ভপাতের মতো একটি সংবেদনশীল ঘটনা ঘটে। এবং তারপর থেকেই ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে অমানবিক আচরণ শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে ওই বধূ যদি তাঁর শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে না চান, তাহলে সেই কারণ যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। আদালত তেমনটাই মনে করে।
এক্ষেত্রে স্বামী যদি মনে করেন, যেহেতু তাঁর স্ত্রী আর তাঁর সঙ্গে এক ছাদের নীচে থাকছেন না, তাই তিনি ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাবেন, তাহলে সেটা সঠিক নয়। কারণ, আইনত তাঁর স্ত্রী ভরণপোষণ চাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, এই মামলা দীনেশ নামক ব্যক্তি তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তাঁর স্ত্রী রিনার শ্বশুরবাড়িতে এসে না থাকার সিদ্ধান্তকে শিখণ্ডী করতে চাইছেন। অথচ, এখনও তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি।
এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দীনের তাঁর দায়িত্বের প্রতি সৎ নন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, রিনা যে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজি হননি, তার নেপথ্যে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। এবং আইনত রিনা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ চাইতেই পারেন।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, এবার থেকে প্রতিমাসে ভরণপোষণের খরচ বাবদ দীনেশকে তাঁর স্ত্রী রিনাকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হবে।