বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হতে হচ্ছে একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি এজেন্সির কর্মী ও আধিকারিকদের। ইদানীংকালে এমন ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠছে নানা মহল থেকে। কীভাবে এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে পদক্ষেপ করা যায়, তার দিশা পেতেই সুপ্রিম কোর্টে রুজু হয়েছিল মামলা। তাতে শীর্ষ আদালত এমন ব্যবস্থা করার কথা বলল, যাতে 'এ-কূল, ও-কূল, দু-কূলই রক্ষা পায়'!
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর, ২০২৪) সুপ্রিম কোর্টে সংশ্লিষ্ট যে মামলাটি বিচারের জন্য উঠেছিল, তাতে অভিযোগ করা হয়, রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন প্রতিহিংসাপরায়ণবশত বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, আধিকারিক ও গোয়েন্দাদের গ্রেফতার করছে! এমনকী, রাজ্যের পুলিশ আদৌ ওই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও আধিকারিকদের গ্রেফতার করতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নও আদালতে ওঠে।
এই মামলার প্রেক্ষিতে দুই পক্ষের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের বার্তা দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, কারও বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, তাহলে রাজ্য পুলিশ অবশ্যই তার তদন্ত করতে পারবে। এমনকী, অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী বা আধিকারিক হলেও সেটা করা যাবে।
কিন্তু, কোনওভাবেই প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে রাজ্যের পুলিশবাহিনী কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কারণ, তাতে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে এক ইডি আধিকারিককে গ্রেফতার করে তামিলনাড়ুর পুলিশ। শুক্রবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। তাতেই রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ার সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নটি উত্থাপন করা হয়।
তাতে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, অভিযুক্ত ব্যক্তি কখনই বলতে পারেন না, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে না। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, সেই দাবি তিনি তুলতেই পারেন। কারণ, সেটা তাঁর অধিকার।
এই মামলায় তামিলনাড়ু সরকারের হয়ে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডিশনাল অ্য়াডভোকেট জেনারেল অমিত আনন্দ তিওয়ারি। তিনি জানান, ওই ইডি আধিকারিক যখন ঘুষ নিচ্ছিলেন, সেই সময়েই তাঁকে বমাল গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁর কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়।
ওই ইডি আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী আইন অনুসারে অভিযোগ দায়ের ও তদন্ত করা হয়েছে বলেও জানান রাজ্যের আইনজীবী।
তিওয়ারি আরও বলেন, রাজ্য পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলেছে। তারা চার্জশিট পেশ করার জন্যও সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু, ইডি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করায় তারা সেই প্রক্রিয়া সারতে পারছে না। তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
অভিযুক্তের আইনজীবী এই তদন্তে পুলিশের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুললে রাজ্যের আইনজীবী পালটা বলেন, একজন অভিযুক্ত কখনও ঠিক করতে পারেন না, কে বা কারা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করবে। আদালতও সেই যুক্তি মেনে নেয়। এবং অভিযুক্তের ন্যায্য তদন্তের দাবি জানানোর অধিকার আছে বলে জানায়।
এরপরই আদালত জানিয়ে দেয়, রাজ্য পুলিশ হোক কিংবা কেন্দ্রীয় সংস্থা - প্রত্যেকেরই নিজস্ব অধিকার রয়েছে। রাজ্য পুলিশ কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মীকে গ্রেফতার করলে তাতে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতেই পারে। কিন্তু, তা বলে রাজ্য পুলিশকেও তদন্ত করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার প্রেক্ষিতে জানিয়েছে, তারা দুই পক্ষেরই যুক্তি শুনবে এবং তার প্রেক্ষিতে রায় ঘোষণা করবে। যাতে সাংবিধানিক সঙ্কট এড়ানো যায় এবং দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
প্রসঙ্গত, এই মামলায় অভিযুক্ত ইডি আধিকারিককে আগেই অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার সেই জামিনের মেয়াদ পরবর্তী নির্দেশিকা আসার দিন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।