বিবাহিত মহিলাদের একাংশ যেভাবে আইনের অপব্যবহার করে তাঁদের স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্থা করছেন, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের এই উদ্বেগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ, ইতিমধ্যেই বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিবিদ, ৩৪ বছরের অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনায় সুবিচারের দাবিতে জনমত ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। অভিযোগ, স্ত্রী (বিচ্ছিন্না) ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অত্যাচারেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ওই তরুণ।
কারণ, ওই মহিলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা শুধুমাত্র মোটা টাকা আদায় করার জন্য অতুলের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিলেন বলে অভিযোগ। অতুল তাঁর সুইসাইড নোটে সেকথা লিখে গিয়েছেন বলেও দাবি সূত্রের।
এই প্রেক্ষাপটে 'বার অ্য়ান্ড বেঞ্চ'-এর তরফ থেকে মঙ্গলবার যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, সেই অনুসারে - একটি মামলার (দারা লক্ষ্মী ও অন্যরা বনাম তেলঙ্গনা রাজ্য ও অন্যরা) শুনানি চলাকালীন শীর্ষ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে বলে, ভারতীয় দণ্ড বিধির ৪৯৮এ ধারাটি আদতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আক্রান্ত বধূকে রক্ষাকবচ প্রদান করলেও বহু মহিলা এই অপব্যবহার করছেন।
মঙ্গলবার বিচারপতি বি ভি নাগারত্না ও বিচারপতি এন কোটিশ্বরের বেঞ্চ এই প্রেক্ষিতে একটি নোট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে - যে আইন মূলত গার্হ্যস্থ হিংসার হাত থেকে মহিলাদের রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, এক শ্রেণির মহিলা সেই আইনকেই শিখণ্ডী করে তাঁদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বাধ্য করছেন, যাতে তাঁরা ওই মহিলাদের 'অন্য়ায্য দাবিসমূহ' পূরণ করতে বাধ্য হন!
সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালত যে রায় ঘোষণা করেছে, তাতে বলা হয়েছে - 'সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশেই বৈবাহিক অশান্তির ঘটনা মারাত্মক হারে বেড়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ ভারতীয় দণ্ড বিধির ৪৯৮এ-র মতো আইনি ধারার অপব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই এই আইনকে নিজেদের স্বার্থে অপব্যবহার করছেন। কিছু মহিলা তাঁদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হেনস্থা করতে এই আইনটিকে হাতিয়ার করছেন। বৈবাহিক যেকোনও অশান্তির ঘটনায় যদি সেই অভিযোগ সঠিকভাবে যাচাই না করা হয়, তাহলে অভিযোগকারিণী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এভাবেই এই আইনের অপব্যবহার করে যাবেন।'
প্রসঙ্গত, এখানে যে নির্দিষ্ট মামলাটির শুনানি চলছিল, সেখানেও অভিযোগকারিণীর দাবি ছিল, তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁর উপর নির্যাতন করেছেন এবং পণের দাবিতে তাঁকে হেনস্থা করেছেন। শীর্ষ আদালত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়।
এর আগে এই মামলাটি ছিল তেলঙ্গনা হাইকোর্টে। সেখানেও সংশ্লিষ্ট মহিলার স্বামীর আবেদন ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা বধূ নির্যাতনের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হোক। কিন্তু, তেলঙ্গনা হাইকোর্ট সেই দাবি মানেনি। ফলত, শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন স্বামী।
এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, সংশ্লিষ্ট মহিলা কেবলমাত্র নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন।