যে কবিতার ছত্রে ছত্রে রয়েছে শান্তির বার্তা, সেই কবিতা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করার 'অপরাধে' এক কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল বিজেপি শাসিত গুজরাটের করিৎকর্মা পুলিশ! আর, তার জেরেই শীর্ষ আদালতে মুখ পুড়ল তাদের। গুজরাট পুলিশের এহেন আচরণ দেখে তাদের তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।
সোমবারের এই ঘটনায় নিরপেক্ষভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রসঙ্গত, যাঁর বিরুদ্ধে এই এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তিনি কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ইমরান প্রতাগড়ি। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, যে কবিতা আদ্যন্ত অহিংসার বার্তা দেয়, সেই কবিতা পোস্ট করার জন্য কীভাবে কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে পদক্ষেপ করা যেতে পারে?
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় আগেই গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইমরান। তাঁর দাবি ছিল, সংশ্লিষ্ট এফআইআর-টি খারিজ করতে হবে। কিন্তু, গুজরাট হাইকোর্ট তা করতে অস্বীকার করে এবং উলটে ইমরানের আবেদনই খারিজ করে দেয়।
এরপর হাইকোর্টের এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই কংগ্রেস সাংসদ। সোমবার বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে এই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে।
আবেদনকারীর বক্তব্য জানার পর এবং যে কবিতা নিয়ে এত বিতর্ক, সেটির মর্মার্থ বোঝার পর শীর্ষ আদালত এই ঘটনায় গুজরাট পুলিশের পাশাপাশি গুজরাট সরকারকেও ধিক্কার জানায়। আদালতের স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ, গুজরাট সরকার পর্যন্ত ওই কবিতার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে এবং তার প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিন এই মামলায় গুজরাট সরকারের হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী স্বাতী গিলদিয়াল। বিচারপতি ওকা তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, 'দয়া করে এই কবিতাটি দেখুন। হাইকোর্ট এই কবিতার অর্থই অনুধাবন করতে পারেনি। এটি আদতে একটি কবিতাই। এই কবিতা কোনও ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ নয়।...'
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের পক্ষ থেকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়, এই কবিতায় কোথাও কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়নি। বস্তুত, এই কবিতায় আদতে শান্তির বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'এই কবিতায় পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে, যদি কেউ হিংসায় জড়িয়ে পড়েন, তাহলেও আমরা হিংসা ছড়াব না। এটাই একমাত্র বার্তা, যেটা এই কবিতার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় মোটেও কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়নি।'
এই মামলায় গুজরাট হাইকোর্টের অবস্থানের প্রতি তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন ইমরানের আইনজীবী কপিল সিবল। তিনি সরাসরি অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলেন, গুজরাট হাইকোর্টের 'সংশ্লিষ্ট বিচারপতিই আইন লঙ্ঘন করেছেন। আর সেটাই আমার কাছে উদ্বেগের বিষয়।'
যদিও এদিন এই মামলায় কোনও রায় ঘোষণা করেনি সুপ্রিম কোর্ট। বদলে মামলাটি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবীকে বলা হয়েছে, 'দয়া করে আপনার মাথা ব্যবহার করে এই কবিতার মর্মার্থ অনুধাবন করুন। হাজার হোক, সৃষ্টিশীলতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।'