কোচিং সেন্টারগুলির পরিকাঠামো আরও নিরাপদ করে তুলতে, যেকোনও ধরনের অঘটন রুখতে এবং সর্বোপরি পড়ুয়াদের জীবন সুরক্ষিত রাখতে একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশের রাজধানী দিল্লিতে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি বহুতলের বেসমেন্টে কোচিং সেন্টার চালানো হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সেখানে মূলত ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের পড়ানো এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।
হঠাৎ অতিবৃষ্টির জেরে সেই কোচিং সেন্টারেই ঘটে যায় ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রাস্তায় বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায়, সেই দল হু হু করে বেসমেন্টের ওই কোচিং সেন্টারে ঢুকতে শুরু করে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী-সহ বাকি সকলে সময় মতো সেখান থেকে উপরে উঠে আসতে পারলেও আটকে যান তিন তরুণ-তরণী। পরে তাঁদের তিনজনেরই দেহ উদ্ধার হয়।
ভবিষ্যতে আর কখনও যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই যথাযথ পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো একগুচ্ছ প্রস্তাব সামনে আনা হয়েছে।
এই প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে - প্রত্যেকটি কোচিং সেন্টারে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্নি নির্বাপণব্যবস্থা সংযুক্ত করা, স্মোক ডিটেক্টর লাগানো - যাতে কোথাও ধোঁয়া উঠলেই সেখানে থাকা সকলকে সতর্ক করা যায়, অটোমেটিক স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম বসানো - যাতে কোনও কারণে আগুন লাগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জল দেওয়া যায়, এবং প্রয়োজনে কোচিং সেন্টারের মেঝেটিও উঁচু করা - যাতে বন্যা হলে সহজে জমা জল ভিতরে ঢুকতে না পারে।
এখানেই শেষ নয়। পরিকাঠামোয় বদল আনার পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলিতে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মীদের নিয়েও কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেমন - প্রত্যেকটি কোচিং সেন্টারে সর্বক্ষণের জন্য স্টুডেন্টস কাউন্সিলর নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।
সেইসঙ্গে, ব্যবস্থাপনায় বদল এনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সুবিধা দেওয়ারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, কোচিং সেন্টারগুলির জন্য নির্দিষ্ট হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে হবে। যাতে পড়ুয়ারা তাঁদের যেকোনও সমস্যা নিয়ে কথা বলতে কিংবা অভিযোগ জানাতে পারেন।
এছাড়াও, যৌন হেনস্থা-সহ যেকোনও ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ জানানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনা চালু করার কথা বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
পাশাপাশি, প্রত্যেকটি কোচিং সেন্টারে পড়ুয়াদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এবং অবশ্যই প্রত্যেকটি কোচিং সেন্টারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো, বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, পরিশ্রুত পানীয় জল , পুরুষ, মহিলাদের ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য আলাদা শৌচালয় এবং সর্বক্ষণ সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার এজলাসে এই সংক্রান্ত মামলাটি পেশ করা হয়। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে এই প্রস্তাবগুলি পেশ করেন 'আদালত বন্ধু' সিদ্ধার্থ দাভে।
তাঁর এই প্রস্তাবগুলি শোনার পর রাজ্য সরকারগুলির এ নিয়ে কী মতামত, তা জানতে চেয়েছে আদালত। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে তাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে এই বিষয়ে নিজেদের মতামত জানাতে হবে।