শারীরিক স্পর্শ ছাড়া কোনও নাবালিকার জামার ওপর দিয়ে বুকে হাত দেওয়া ঘটনাকে পকসো আইনের আওতায় যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। একটি মামলায় এমনই রায় দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ। এই নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। এবার সেই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। দুই সপ্তাহ বাদে এই মামলাটির শুনানি করবে আদালত।
এদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এই মামলাটির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের কাছে। বিচারপতি বোবডের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ অভিযুক্ত ও মহারাষ্ট্র সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দিতে হবে। তবে ততদিন হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে দিল আদালত।
এদিন সরকারের শীর্ষ আইন অফিসার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন যে এই নির্দেশ অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি হয়ে যেতে পারে এর জেরে। এই জন্য আদালতকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি। অন্যদিকে এই অর্ডারের বিরুদ্ধে আপিলও করা হচ্ছে বলে জানান এজি। আদালত আপাতত হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে রদ করে এজিকে পিটিশন ফাইল করার অনুমতি দেন।
প্রাথমিক ভাবে ট্রায়াল কোর্টে পকসো আইনের আট নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয় এই ব্যক্তি। তার তিন বছরের জেল হয়ে। পরে হাইকোর্ট বলে পকসো ধারায় সে দোষী নয়। শুধু শ্লীলতাহানির জন্য একবছরের জেল হয় তার। অভিযোগ যে এক নাবালিকার বুকে হাত দিয়ে সালওয়ার সরিয়ে দিয়েছিল এই ব্যক্তি।
গত ১৯ জানুয়ারি একটি রায়ে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি পুষ্প গানেদিওয়ালা জানিযেছেন, ‘যৌন অভিপ্রায় নিয়ে সরাসরি শরীরে স্পর্শ’ করা হলে তবেই তা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। নিম্ন আদালতের রায় সংশোধন করেছেন বিচারপতি গানেদিওয়ালা। ২ বছরের এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ৩৯ বছরের এক ব্যক্তিকে পকসো আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় আওতায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সঙ্গে ৫০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল। অনাদায়ে আর এক মাসের জেলের সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত।
তবে বম্বে হাইকোর্টে জানিয়েছে, যৌন অভিপ্রায়ে কোনও শারীরিক স্পর্শ না হওয়ায় সেই ঘটনাকে পকসো আইনের আওতায় ধরা যাবে না। ওই ব্যক্তি নাবালিকার বুকে চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, নাবালিকার টপ খোলা হয়েছিল কিনা বা টপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে নাবালিকার বুকে স্পর্শ করেছিল কিনা, সেই সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া ওই নাবালিকার বুকে চাপ দেওয়ার ঘটনাকে যৌন নির্যাতনের আওতায় বিবেচনা করা যাবে না। বিচারপতি জানিয়েছেন, পকসো আইনের আওতায় যে কঠোর শাস্তির বিধান আছে, তার জন্য আরও প্রমাণ এবং গুরুতর অভিযোগের প্রয়োজন ছিল। রায়ে আরও জানানো হয়েছে, যৌন নিযার্তনে যে ‘শারীরিক স্পর্শ’-এর কথা বলা হয়েছে, তা অবশ্যই সরাসরি হতে হবে।