করোনাভাইরাস মৃতদের দেহ নদীতে ছুড়ে ফেলার ভিডিয়ো দেখিয়েছিল একটি সংবাদমাধ্যম। সেজন্য সেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়ে তীব্র কটাক্ষ করল সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার করোনাভাইরাসের জরুরি ওষুধ, অক্সিজেন, টিকার জোগান নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানিতে সম্মানের সঙ্গে মৃতদেহ সৎকারের বিষয়টি উত্থাপন করেন আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা। সেই প্রসঙ্গে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, 'নদীতে একটি মৃতদেহ ছুড়ে ফেলার ছবি দেখেছি আমরা। আমরা জানি না ওটা দেখানোর জন্য ওই খবরের চ্যানেলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়েছে কিনা।'
এমনিতে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য কোপ নেমেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উপর। সম্প্রতি তো দলের বিদ্রোহী সাংসদের বক্তব্য সম্প্রচার করার জন্য দুটি তেলুগু সংবাদ চ্যানেলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা রুজু করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। তাতে সোমবারই স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলেছে, 'আমাদের দেশদ্রোহিতার পরিধি নির্ধারণের সময় এসে গিয়েছে।' সেই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই করোনা সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে কর্তৃপক্ষকে একহাত নেয় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ।
তারইমধ্যে সোমবারের শুনানিতে টিকাকরণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশ্নে জর্জরিত হয় কেন্দ্র। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের তরফে বলা হয, 'আপনারা ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া কথা বলে যান। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা আপনারা জানেন না। ঝাড়খণ্ডের একজন গরিব কর্মী কি কমন সেন্টার পর্যন্ত যাবেন? আপনাদের অবশ্যই নথিভুক্তিকরণের ব্যবস্থা আছে? কিন্তু আপনারা কীভাবে ডিজিটাল বিভেদ ঘুচিয়ে দেবেন? যে পরিযায়ী শ্রমিকরা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যান, তাঁদের প্রশ্নের কী উত্তর দেবেন?'
সোমবার করোনাভাইরাসের জরুরি ওষুধ, অক্সিজেন, টিকার জোগান নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি হয়। সেই শুনানিতে ১৮-৪৪ বছরের টিকাকরণ, টিকার জন্য গ্লোবাল টেন্ডারের বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্রকে একাধিক প্রশ্ন করে শীর্ষ আদালত। গ্রামের মানুষের টিকাকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, 'ডিজিটাল বিভেদের বিষয়টার কী হল? সবাইকে কো-উইনে নথিভুক্ত হবে না। সেখানে নথিভুক্ত করা কি গ্রামের মানুষের সত্যিই সম্ভব? আমরা কীভাবে আশা করতে পারি যে তাঁরা করতে পারবেন? আমাদের নিজেদের আইনের ক্লার্ক এবং বন্ধুরা চেষ্টা করেছেন।'
কেন্দ্রের তরফে যুক্তি দেওয়া হয় যে গ্রামবাসীরা কোনও কমন সেন্টার বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। তাহলেই তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের তরফে প্রশ্ন করা হয়, 'এটি কি বাস্তবসম্মত?'