আইনে পশু-পাখিদের ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে গণ্য করা যায় কি না, তা নির্ধারণ করতে বুধবার উদ্যোগ নিল সুপ্রিম কোর্ট। পশু নির্যাতন বিরোধী এক এনজিও-র জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে এই বিষয়ে অগ্রসর হয়েছে শীর্ষ আদালত।
উল্লিখিত এনজিও-র সম্পাদক দেবেশ সাক্সেনা জানান, ‘পশু-পাখিকে প্রাণী নয়, সব সময় সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। পশু জগতের প্রতি বেঁচে থাকার অধিকার ন্যস্ত করার উদ্দেশে তাদের আইনি পরিচিতি প্রয়োজন। পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ করতেই ১৯৬০ সালের পশু নির্যাতন দমন আইন মেনে এই ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। বর্তমানে পশু নির্যাতনের অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীর মাত্র ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হয়, যা এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করার জন্য কোনও বাধাই তৈরি করতে পারে না।’
এ দিন প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি আবেদনকারী সংস্থার সম্পাদক সাক্সেনার কাছে জানতে চান, ‘আপনি কি বলতে চাইছেন, আপনার কুকুর আর আপনি নিজে সমগোত্রীয়? তাদের আইনি পরিচয় দিলে তাদেরও মামলা লড়ার অধিকার থাকবে, এমনই চাইছেন?’
জবাবে সাক্সেনা বলেন, ‘পশু-পাখিদেরও মন রয়েছে। তারাও অনুভূতি সম্পন্ন প্রাণী। ২০১৯ সালে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট এবং ২০১৮ সালে উত্তরাখণ্ড হাই কোর্ট তাদের আইনি পরিচয় স্বীকার করেছে।’
এর পর ১৯৬০ সালের আইন কার্যকর করার উদ্দেশে আবেদনটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ।
এ দিনের শুনানি শেষ হলে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী হরিশ সালভে বেঞ্চকে জানান, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় পশু-পাখিদের আইনি পরিচয়ের বিষটিকে মান্যতা দেওয়া যায়। আইনের নির্দেশ ছাড়া বেঁচে থাকার অধিকার তাদেরও প্রাপ্য।
তাঁর কথা শুনে বেঞ্চ জানায়, ‘আপনাকে আদালতের বন্ধু (amicus curiae ) হিসেবে নিয়োগ করা হবে।’
আবেদনকারী সংস্থা শুনানিতে সাম্প্রতিক বেশ কিছু পশু নির্যাতনের ঘটনা আদালতের কাছে পরিবেশন করে। এর মধ্যে রয়েছে গত মে মাসে কেরালায় গর্ভবতী হস্তিনীর মুখে পটকা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা, গত জুলাই মাসে উত্তর প্রদেশে গো হত্যা এবং ওই মাসেই নাগাল্যান্ডে খাদ্য হিসেবে কুকুর পাচারের মতো ঘটনা। আবেদনকারী জানায়, এই ধরনের কোনও ঘটনা জাতীয় অপরাধ নথি ব্যুরো-র (NCRB) পরিসংখ্যানে স্থান না পাওয়াও বিস্ময়কর।