সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সংকেত পেল আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ। আজ ৩-২ রায়ে আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের নিয়ম বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী বলেছেন, আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে সংরক্ষণ (EWS reservation) সংবিধান বিরোধী নয়।'
গত ১৩ সেপ্টেম্বর আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার রায়দানের সময় বিচারপতি মাহেশ্বরী মন্তব্য করেন, সংরক্ষণ হল ইতিবাচক পদক্ষেপের একটি হাতিয়ার। যা সমাজে সমতা আনার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ সংরক্ষণের মাধ্যমে কোনও অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া জাতিকে সমাজের মূলস্তরে আনার উপায় বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি মাহেশ্বরী।
তিনি বলেন, ‘আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানকে লঙ্ঘন করে না। আর্থিক দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ফলে সমানাধিকারের বিধি বা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লঙ্ঘিত হয় না। সেইসঙ্গে ৫০ শতাংশ (সংরক্ষণের সর্বোচ্চসীমা) পেরিয়ে গেলেও সংবিধানের মূল কাঠামো লঙ্ঘিত হত না। কারণ শুধুমাত্র ১৬ (৪)এবং (৫) ধারার জন্য সর্বোচ্চসীমা ধার্য করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: EWS: গরিবদের ১০ শতাংশ কোটা কি অন্যদের উপর প্রভাব ফেলবে? আদালতে যা জানাল কেন্দ্র
বিষয়টি আরও কিছুটা ব্যাখ্যা করে বিচারপতি মাহেশ্বরী বলেন, 'অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে হওয়ায় আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের বিষয়টি সংবিধানের মূল ভিত্তিকে লঙ্ঘন করে না।' একইসুরে বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী বলেন, 'জেনারেল ক্যাটেগরির সঙ্গে তাঁদের সমানভাবে বিচার করা যাবে না। এই ধরণের শ্রেণিবিভাগের ফলের সমানাধিকারের নিয়ম লঙ্ঘিত হয় না।'
উল্লেখ্য, সংবিধানের ১০৩ তম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যে সংশোধনীর আওতায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সংবিধানের ১৫ (৬) এবং সংবিধানের ১৬ (৬) ধারায়। তার ফলে যে প্রার্থীদের পরিবারের বার্ষিক আয় আট লাখের কম, চাকরি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল।
মামলাকারীদের দাবি ছিল, সংবিধানের ৪৬ ধারায় 'শ্রেণি' হিসেবে শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা বলা হয়েছে। আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির কথা বলা হয়নি। সেই মামলায় আজ রায়দান করেছে প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত, বিচারপতি মাহেশ্বরী, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি ত্রিবেদী এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ। সোমবার সংরক্ষণের বিরুদ্ধে রায় দেন প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি ভাট। বিচারপতি ভাট বলেছেন, ‘আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের বিষয়টি 'বৈষম্যমূলক এবং (সংবিধানের) মূল ভিত্তিকে লঙ্ঘিত করছে।’