বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপি। এবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন, রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র হল গণতন্ত্রের সবথেকে বড় শত্রু। যা নয়া ধরনের একনায়কতন্ত্র। তার ফলে দেশকে অযোগ্যদের বোঝা বইতে হচ্ছে।
জাতীয় যুব সংসদ উৎসবে মোদী জানান, যে রাজনীতিবিদরা পরিবারতন্ত্রের ফসল, তাঁদের আইনের প্রতি কোনও মর্যাদা বা কোনও ভয় নেই। কারণ তাঁরা মনে করেন যে দুর্নীতির জন্য আগের প্রজন্মকে ধরা হয়নি, তখন আইন তাঁদের ছুঁতে পারবে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের নাম না নিলেও সুকৌশলে তাঁদের বিরুদ্ধেই কার্যত তোপ দেগেছেন মোদী।
তারইমধ্যে যুব সংসদ উৎসবের মঞ্চেও অধিকাংশ সময় স্বামীজির মতাদর্শ, চিন্তাভাবনার উপর জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, যে কোনও যুগে, যে কোনও প্রজন্মের কাছে আদর্শ হলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
মঙ্গলবার সকালেই স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন মোদী। পরে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় যুব সংসদ উৎসবের প্রতিযোগীদের উদ্দেশে ভাষণে মোদী জানান, স্বামীজির আদর্শ সব প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগায়, পথপ্রদর্শন করে। ভারতের এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানকার মানুষরা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হননি। ব্রিটিশদের শাসনে ভারতের যে শক্তি ছিল, তা লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ আবারও ভারতের সেই শক্তি আবার স্মরণ করিয়েছিলেন, বুঝিয়েছিলেন। ভারতীয়দের ক্ষমতা যে কতটা হতে পারে, তা নিয়ে আত্মোপলব্ধি গড়ে তুলেছিলেন। জাগিয়ে তুলেছিলেন রাষ্ট্রীয় চেতনা।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও স্বামীজির বড়সড় ভূমিকা ছিল বলে জানান মোদী। যুব ‘জনপ্রতিনিধি’-দের উদ্দেশে তিনি জানান, স্বাধীনতার আগে বিপ্লবীরা স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁদের গ্রেফতারির বা ফাঁসির সময় স্বামীজির বাণীর খোঁজ মিলত। দেশভক্তি, দেশ গড়ে তোলা, স্বাধীনতার জন্য স্বামীজি কীভাবে এত মানুষকে প্রভাবিত করতে পারতেন, তা রীতিমতো আলোচনার বিষয় ছিল। মোদীর কথায়, ‘স্বাধীন হয়ে গিয়েছে দেশ। কিন্তু আজও আমাদের মধ্যে আছেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর চিন্তাভাবনা আমাদের প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে।’
একইসঙ্গে কোনও দেশের গঠনে যুব সম্প্রদায়ের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাতে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাভাবনাও তুলে ধরেন তিনি। সঙ্গে জানান, দেশের স্বাধীনতার জন্য অনেকেই কম বয়সে নিজেদের আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। মোদীর কথায়, ‘যখন লক্ষ্য স্পষ্ট হয়, ইচ্ছাশক্তি বড় হয়, তখন বয়স কোনও বাধা হয় না। বয়স এত গুরুত্বপূর্ণ হয় না। ব্রিটিশ শাসনে স্বাধীনতা আন্দোলন সামলেছিল যুব সম্প্রদায়। জানো, শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর যখন ফাঁসি হয়েছিল, তাঁর বয়স কত ছিল? মাত্র ১৮-১৯ বছর। ফাঁসির সময় ভগৎ সিংয়ের বয়স ছিল মাত্র ২৪ সাল। ভগবান বীরসা মুন্ডা যথন শহিদ হয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স বড়জোর ২৫ ছিল।’