দুর্ভোগের মুখে শূকর চাষীরা। আফ্রিকান সোয়াইন ফিভারের (এএসএফ) প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা নেমেছে ব্যবসায়। ২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মিজোরামের শূকর চাষী এবং পালনকারীরা। ফিভারের কোপে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে ৫,৪৩০ টিরও বেশি শূকর। আর এখনও পর্যন্ত ১০,৩০০ টিরও বেশি আক্রান্ত শূকরকে মেরে ফেলা হয়েছে, বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পশুপালন ও ভেটেরিনারি বিভাগের কর্মকর্তারা এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে এই সোয়াইন ফিভারের প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ টিরও বেশি শূকর মারা যাচ্ছে। সংক্রামক রোগের কারণে বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন ২০০ টিরও বেশি শূকর মারা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন যে ফেব্রুয়ারি মাসে এই রোগ হানা দেওয়ার পর, ছয়টি জেলার ১৬০ টিরও বেশি গ্রাম, যেমন আইজল, চাম্পাই, লুংলেই, সাইচুয়াল, খাওজাওল এবং সেরচিপ গ্রামে এএসএফ প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল।
কর্মকর্তাদের মতে, এই রোগের কারণে, ২০২১ সালে ৩৩,৪২০টি শূকর সংক্রামক রোগের কারণে মারা গিয়েছিল। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা ছিল ১২,৮০০টি এবং ২০২৩ সালে ১,০৪০টি শূকর মারা গিয়েছিল। মিজোরামে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভারের প্রথম কেসটি ২০২১ সালে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে, বাংলাদেশ সীমান্তের লুংলেই জেলার লুংসেন গ্রাম থেকে রিপোর্ট করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে, প্রতি বছর এই রোগটি ধাপে ধাপে বিরাট আকার ধারণ করছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই রোগের প্রাদুর্ভাব তখনই ঘটে, যখন জলবায়ু উষ্ণ হতে শুরু করে এবং প্রাক-বর্ষা বৃষ্টি শুরু হয়। রাজ্যে এই রোগের কারণে শূকরের ক্ষতির জন্য সরকার এখনও পর্যন্ত কয়েকশ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
এই ভয়ানক রোগের প্রাদুর্ভাবের পর, পশুপালন ও ভেটেরিনারি বিভাগ ছয়টি জেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং এলাকাকে, ২০০৯ সালের প্রাণী আইনের অধীনে সংক্রামিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগটি সংক্রামিত অঞ্চল থেকে শূকরের মাংস সরবরাহে বাধা দিয়েছে। রাজ্য সরকার প্রতিবেশী রাজ্য এবং দেশগুলি থেকে শূকর আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার, বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকে আনা শূকরের মাংসের কারণে এএসএফের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। মিজোরাম মায়ানমারের সঙ্গে ৫১০-কিমি-লম্বা বেড়বিহীন সীমান্ত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ৩১৮ কিলোমিটার ভাগ করে নিয়েছে।
শূকরের মাংস হল উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আদিবাসী এবং অ-উপজাতি উভয়ের দ্বারা খাওয়া সবচেয়ে সাধারণ এবং জনপ্রিয় খাদ্যগুলোর মধ্যে একটি। এই অঞ্চলে শূকরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা থাকায়, উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এর বার্ষিক ব্যবসার অঙ্ক করে প্রায় ৮,০০০-১০,০০০ কোটি টাকার মূল্যে এসে দাঁড়ায়। আসাম রি সরবরাহের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।