প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তাঁর সরকারের পতন হতেই আবারও সংবাদ শিরোনামে উঠে এল সিরিয়ার কুখ্যাত সেদনায়া কারাগার। যাকে অনেকেই 'মানুষ জবাইয়ের কসাইখানা' বলে উল্লেখ করেন!
কিন্তু, একটি কারাগারের এমন নামকরণ করা হল কেন? তথ্য বলছে, এর নেপথ্যে রয়েছে বন্দিদের উপর পৈশাচিক অত্যাচারের এক দীর্ঘ ইতিহাস! বাশার পরাস্ত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই সেই 'কসাইখানা'র অভ্যন্তরে বিদ্রোহীরা ঢুকে পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাদের ভিডিয়ো ক্যামেরায় বন্দি হয়ে প্রকাশ্যে এসেছে সেদনায়া কারাগারের অন্দরমহলের দৃশ্য।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একাধিক দাবি অনুসারে, বাশার আল-আসাদের জমানায় হাজার-হাজার নারী, পুরুষ এমনকী শিশুকেও এই কারাগারে ধরে এনে বন্দি করে রাখা হত! তারপর সেই বন্দিদের উপর চলত অকথ্য অত্যাচার।
দামাস্কাসে বিদ্রোহীরা ঢুকে পড়ার পরই আমজনতা সেই কসাইখানার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারাই সেই বন্দিশালার সমস্ত কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে। এমনকী, সোশাল মিডিয়ায় যেসমস্ত ছবি ভাইরাল হয়েছে, তা দেখলে যেকোনও সংবেদনশীল ব্যক্তির পক্ষেই চোখের জল ধরে রাখা সম্ভব নয়।
সেইসব ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ইট, পাথর - যে যা দিয়ে পারছেন, তার সাহায্যেই কারাগারের একের পর এক কুঠুরির দরজা ভাঙছেন। আর ভিতর থেকে কাতারে কাতারে বেরিয়ে আসছেন বন্দিরা। সেই দলে নারী ও পুরুষরা যেমন রয়েছেন, তেমনই একাধিক নাবালককেও ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে।
বলা হচ্ছে, এই কারাগারের লৌহকপাট ভাঙতে বিদ্রোহীরাও সাহায্য করেছে। তাদের বন্দুকের গুলি ছুড়ে দরজার তালা খুলতে দেখা গিয়েছে।
এই ঘটনার ফলে বহু বছর পর আপনজনদের কাছে ফিরতে ফেরেছেন বন্দিরা। তাঁদের পেয়ে আবেগে ভেসেছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। তথ্য বলছে, সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস থেকে এই কসাইখানার দূরত্ব মেরেকেটে ৩০ কিলোমিটার।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, বাশার আল-আসাদ ও তাঁর পরিবার যাতে গোটা সিরিয়ার উপর আজীবন রাজত্ব করে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই সেদনায়া কারাগারকে ব্যবহার করা হত। সরকারের বিরুদ্ধে ন্যূনতম বিরোধিতা দেখালেই সেই ব্যক্তিকে ধরে এনে এখানে বছরের পর বছর আটকে রাখা হত।
যাঁরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মানসিক বা শরীরিক নির্যাতন করেই রেহাই দিত না কারাগারের 'কসাই'রা। সমানে চলত যৌন অত্যাচার। নারী, পুরুষ থেকে নাবালক, নাবালিকা - রেহাই পেত না কেউ!
এই কারাগারের একটি ভিডিয়ো 'ডেইলি মেল'-কে পাঠিয়েছেন স্থানীয় সমাজকর্মী ওমর সাওউদ। তিনি জানিয়েছেন, 'এই কারাগারের তিনটি তল রয়েছে মাটির নীচে। যাকে বলা হয় রেড প্রিজন বা লাল কারাগার। এখনও পর্যন্ত কারাগারের সেই অংশ খোলা সম্ভব হয়নি। কারাগারের ওই অংশটি বন্ধ রাখতে এমন জটিল তালা ব্যবহার করা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত খোলা সম্ভবই হয়নি! আর, যে জেলকর্মীরা এতদিন ওই তালা খুলত, তারাও সবাই পালিয়ে গিয়েছে।'