সম্প্রতি আইনজীবী মারফৎ এক সাক্ষাৎকারে তবলিঘি জামাত প্রধান মৌলানা সাদ হিন্দুস্তান টাইমস-কে জানিয়েচেন, তিনি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। তাঁর দাবি, ভারতে করোনা সংক্রমণের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত দিল্লির নিজামুদ্দিনের মরকজ ভবনে কোনও অবৈধ কাজকর্ম হয়নি।
মৌলানা জানিয়েছেন, মরকজ নিজামুদ্দিনে আয়োজিত ইজতেমা আয়োজন করার আগে যথাযথ অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, বংলেওয়ালে মসজিদ চত্বরে সারা বছরই প্রার্থনাসভা ও ধর্মীয় প্রচারানুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সেই কারণে মসজিদের ভিতরে ইজতেমার মতো ধর্মিীয় সমাবেশের জন্য পৃথক অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
আরও পড়ুন: তবলিগি জামাতের নিজামুদ্দিনের সমাবেশের খেসারত দিচ্ছে দিল্লি- অরবিন্দ কেজরিওয়াল
তবলিঘি জামাত সদস্যদের সন্ধান পেতে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না, এই অভিযোগ মানতে চাননি মৌলানা সাদ। তাঁর দাবি, বরাবরই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করে এসেছে জামাত। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত দিল্লির পুলিশের তরফে পাঠানো সব নোটিশেরই জবাব দিয়েছে তাঁর সংগঠন।
তাঁর সম্পর্কে এত অভিযোগ উঠলেও চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে থাকার কারণেই কোনও অভিযোগের জবাব দেননি বলে জানিয়েছেন মৌলানা। তাঁর মতে, সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে বিশেষ খবর না রাখার কারণেই জামাত সদস্যরাও মৌন রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করার আবেদন জানিয়েছেন জামাত প্রধান।:
হিসাব বহির্ভূত বিদেশি আর্থিক সাহায্য পাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে তবলিঘি জামাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট। এই বিষয়ে মৌলানা সাদের দাবি, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জামাতের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এমন কোনও নোটিশ তাঁরা পাননি। গোটা বিষয়টিই সংবাদমাধ্যমের রটনা বলে তিনি জানান।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কী কারণে কয়েকজন বিদেশি জামাত সদস্যকে পর্যটকের ভিসা থাকা সত্ত্বেও ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়েছে? তার জবাবে মৌলানা সাদ জানিয়েছেন, চিরকাল এমনই সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে ভারতে এসেছেন বিদেশিরা। তাই নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। শুধু তাই নয়, বিদেশী অভ্যাগতদের সম্পর্কে পুলিশকে জানানো হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। তা সত্ত্বেও কী কারণে মরকজকে দায়ী করা হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন জামাত প্রধান।
আরও পড়ুন: নিজামুদ্দিনের সমাবেশ অনুমোদনের জন্য দায়ী কেন্দ্র, অভিযোগ মহারাষ্ট্রের মন্ত্রীর
তবে ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে তবলিঘি জামাতকে কাঠগড়ায় তোলার বিষয়টি নিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছেন মৌলানা সাদ। তাঁর দাবি, অল্প কয়েক জন জামাত সদস্যের নমুনা পজিটিভ ধরা পড়লেও অনেক বেশি সংখ্যক সদস্যের নমুনা যে নেগেটিভ প্রমাণিত হয়েছে, তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, গত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে গোটা মার্চ মাসে দেশের নানান প্রান্তে যে সমস্ত জনসমাবেশ আয়োজিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন করোনা সংক্রমণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে না?
করোনা সংক্রমণ সম্পর্কে জানা থাকলেও কেন তিনি সমাবেশ বাতিল করেননি জানতে চাইলে মৌলানা বলেন, বহু আগে থেকেই এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল এবং বিদেশ থেকে অভ্যাগতরা আসতে শুরু করেছিলেন। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল বলেও তিনি দাবি করেন। তবে জনতা কারফিউ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশ বাতিল করে অংশগ্রহণকারীদের বিদায় দেওয়া হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতা তবলিঘি জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন শুনে মৌলানা সাদ জানান, এই বিষয়ে তিনি কিছু শোনেননি।