প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ২০১৫ সালে বাতিল হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা। অথচ এখনও তারই অধীনে ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত করা হচ্ছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি এর বিরুদ্ধে 'প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা' নিক। মঙ্গলবার এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এটিকে 'গুরুতর উদ্বেগের' বিষয় বলেও অভিহিত করে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি (CJI) উদয় উমেশ ললিত এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাটের একটি বেঞ্চ জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকজন আইনজীবী এ বিষয়ে আদালতকে আশ্বস্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে পুলিশ 66A ধারা প্রয়োগ করবে না। এ বিষয়ে যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের(IT Act) ৬৬এ ধারার মাধ্যমে, 'হুমকি' বা 'আপত্তিকর' সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার করা যেত। আরও পড়ুন: ‘ইচ্ছে হলে স্কুলে মিনিস্কার্ট পরে যাবেন?’ হিজাব মামলায় সুপ্রিম প্রশ্নবাণ
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানানয়, 'এখনও কিছু ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগ করছে পুলিশ। অভিযোগগুলি এখনও বিবেচনাধীন। এটি একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে, আদালতের ঘোষণা সত্ত্বেও, ৬৬এ ধারার অধীনে এ জাতীয় অপরাধগুলি এখনও নথিভুক্ত করা হচ্ছে।'
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী জোহেব হোসেনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সমস্ত রাজ্যের মুখ্য সচিবদের সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তাদের দ্রুত সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী করার কথা বলেছে আদালত। এর জন্য আগামী ৩ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
অলাভজনক সংস্থা পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ(PUCL) এ বিষয়ে আদালতে একটি আর্জি দায়ের করে। তাতে ৬৬এ ধারার অধীনে যাতে মামলা নথিভুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং আদালতকে নির্দেশ জারি করার অনুরোধ করা হয়। এই বাতিল হওয়া আইনের অধীনে যাতে কাউকে গ্রেফতার বা বিচার করা হয়, সেই আর্জি করে PUCL। তার ভিত্তিতেই এই আদেশ সুপ্রিম কোর্টের। আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায় না, সাফ জানাল সুপ্রিম কোর্ট
এনজিও-র পক্ষে ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী সঞ্জয় পারিখ। ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন এবং সিভিক ডেটা ল্যাবস দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দেন তিনি। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, বাতিল করা আইনের অধীনেই গত ছয় বছরে ১,৩০৭টি নতুন মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, মোট ৩৮১টি। এরপরেই রয়েছে ঝাড়খণ্ড(২৯১) এবং উত্তরপ্রদেশ(২৪৫)।
২০২১ সালের জুলাইয়ে PUCL-এর আবেদনের শুনানির সময়, আদালত জানায়, এটি 'অবিশ্বাস্য' এবং 'দুঃখজনক' যে বাতিল হওয়া এই ধারাতেই মামলার সংখ্যা আগের তুলনায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সময়, আদালত এই আইনের অধীনে মামলা নথিভুক্ত করা বন্ধের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মারফত সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে নির্দেশ জারির সুপারিশ করে। সেই মতো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে নির্দেশিকা জারি করে।
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে ২০০৯ সালে ৬৬এ ধারা যোগ হয়েছিল। এর অপব্যবহার এবং অস্পষ্টতার উল্লেখ করে আইনটির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০১৪ সালে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স(NDA) সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা আদালতকে জানায় যে, যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে, প্রযোজ্যতা পর্যালোচনা করে, তবেই ৬৬এ ধারা প্রয়োগ করা হবে।
তবে ২০১৫ সালের এক রায়ে মত প্রকাশের ও বাক স্বাধীনতার গুরুত্বকে সর্বোচ্চ বলে পর্যবেক্ষণ করে আদালত। ৬৬এ ধারা এই মৌলিক অধিকারের উপর প্রভাব ফেলে বলে জানায় আদালত। আইনটি বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলে, 'সরকার আসবে যাবে, এদিকে ৬৬এ ধারা চলতেই থাকবে। যেটা এমনিতেই অপ্রযোজ্য, সেটা এভাবে আশ্বাস দিয়ে টিকিয়ে রাখা যায় না।'
আদালত ৬৬এ ধারাকে উপসংহারহীন এবং অসাংবিধানিকভাবে অস্পষ্ট বলে অভিহিত করে। আইনটিকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। এটি বাকস্বাধীনতার অধিকার, ভিন্ন মতের অধিকার, তথ্য জানার অধিকারকে আক্রমণ করছে বলে পর্যবেক্ষণ করে সুপ্রিম কোর্ট। সাংবিধানিক অধিকারের উপর এই আইনের একটি 'ঠান্ডা প্রভাব' ছিল বলে জানায় শীর্ষ আদালত।