তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আলি খান মুত্তাকির দিল্লি সফরের সময় যৌথ বিবৃতি জারি করেছে ভারত-আফগানিস্তান। সেই যৌথ বিবৃতি নিয়ে পাকিস্তান এবার তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। এমনকী ইসলামাবাদে আফগান রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। বিবৃতিতে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই আবহে পাকিস্তান সেই বিবৃতির আপত্তি জানিয়ে বলেছে যে এটা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের লঙ্ঘন।
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, যৌথ বিবৃতিতে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা রাষ্ট্রসংঘের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাব এবং জম্মু ও কাশ্মীরের আইনি মর্যাদার পরিপন্থী। অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের আত্মত্যাগ ও অনুভূতির প্রতি এটা ভারতের অসংবেদনশীলতা।' এদিকে দিল্লিতে বসে আফগান বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মুত্তাকির এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে এমন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সম্পর্কে তারা বেশ কয়েকবার আফগানিস্তানকে অবহিত করেছে। পাকিস্তানের বক্তব্য, 'আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থেকে নিজেকে রেহাই দিতে পারে না।' এদিকে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানে বসবাসরত অননুমোদিত আফগান নাগরিকদের তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে।
উল্লেখ্যে, তালিবানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এখন ভারতে আছেন। প্রসঙ্গত, তালিবানরা কাবুলে ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফরে দিল্লি এসেছেন মুত্তাকি। আর সেদিনই কাবুলে বিস্ফোরণ হয়। জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর মধ্যরাতের দিকে কাবুলের পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আকাশে বিমানের আওয়াজ শোনা যায় এবং তার পরপরই বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। এরপর গুলির আওয়াজও শোনা যায়। আমু টিভি এবং অন্যান্য আফগান মিডিয়া সূত্রের মতে, টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ লুকিয়ে থাকা সন্দেহে একটি নির্দিষ্ট কম্পাউন্ড লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছিল। তবে পরে মেহসুদের একটি অডিয়ো বার্তা প্রকাশ করা হয় টিটিপির তরফ থেকে। দাবি করা হয়, তিনি বেঁচে আছেন।
এরপরই ১১ অক্টোবর রাতে পাকিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত একাধিক আউটপোস্ট গুঁড়িয়ে দেয় আফগানিস্তানের সেনা। আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজে এমনই দাবি করা হয়েছে তালিবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্র উদ্ধৃত করে। উল্লেখ্য, দু'দিন আগে কাবুলে পাক এয়ারস্ট্রাইকের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই আবহে গতকাল রাতে দুই দেশের সীমান্ত হিসেবে পরিচিত ডুরান্ড লাইন বরাবর গোলাগুলি বিনিময় হয়। এই আবহে পাকিস্তানের অন্তত ৬ জন সেনা সদস্য নিহত এবং ২ জনকে জীবিত আটক করার দাবি করেছে তালিবান কর্তপক্ষ।
জানা গিয়েছে ডুরান্ড লাইন বরাবর কুনার এবং হেলমন্দ প্রদেশে পাক এবং তালিবান সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধেছিল। সেই সংঘর্ষে পাকিস্তানের দু'টি আউটপোস্ট গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে তালিবান। আফগানিস্তানের তরফ থেকে ২০১তম খালিদ বিন ওয়লিড আর্মি কোর এই হামলা চালিয়েছিল। পরে তালিবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র এনায়াত খোয়ারাজম বার্তাসংস্থা এএফপি-কে বলেন, তাদের সামরিক অভিযান সফল হয়েছে। এরপর পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'প্রতিপক্ষ যদি আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ম লঙ্ঘন করে তাহলে আমাদ রসেনা নিজেদের জমি রক্ষা করতে উপযুক্ত জবাব দেবে।' এদিকে এই সংঘর্ষ বা হামলার বিষয়ে ইসলামাবাদ কোনও বাক্য ব্যয় করেনি।