মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় থেকে পাকিস্তানই চেয়েছিল যাতে আফগানিস্তানে ফের তালিবানি শাসন ফিরে আসে। এর আগে বহু বছর ধরে পাকিস্তানেরই বিভিন্ন প্রদেশে ঠাঁই পেয়েছিল মার্কিন সেনার তাড়া খাওয়া তালিবানিরা। এহেন তালিবানকে নিজেদের 'বন্ধু' ভেবেছিল পাকিস্তান। তবে সেই বন্ধুর হাতেই এবার নাক কাটল ইসলামাবাদের। সম্প্রতি তালিবান সরকারের তরফ থেকে এক রিপোর্ট পেশ করে অভিযোগ করা হল, পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়। এককালে যাদের আশ্রয়ে তালিবান ছিল, তাদের দিকেই আঙুল তুলেছে তারা। এই প্রথম পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এহেন রিপোর্ট প্রকাশ করল তালিবান সরকার।
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদর অস্তিত্বের কথা গোটা বিশ্বই জানে। পাকিস্তানের হেন কোনও প্রদেশ নেই যেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি নেই। আন্তর্জাতিক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় বহু পাকিস্তানির নাম আছে। এই আবহে ভারতের পাশাপাশি পাক সন্ত্রাসবাদের শিকার তাদের অপর দুই পড়শি আফগানিস্তান এবং ইরান। এহেন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি তালিবনা ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছিল। আফগানিস্তানে এয়ারস্ট্রাইক করে সাধারণ মানুষ মারার অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এই সবের মাঝে তালিবানের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, পাকিস্তানের পশ্চিম এবং উত্তরপশ্চিমের দুই প্রদেশ - বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে পাকিস্তান। সেই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 'বিভিন্ন দেশে হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তানের আশ্রয়ে থাকা এই জঙ্গিরা'। সাম্প্রতিককালে ইসলামাবাদ এবং কাবুলের সম্পর্ক যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, এই রিপোর্টই তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
তালিবানের সেন্ট্রাল কমিশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিয়ারেন্স অ্যাফেয়ার্সের বার্ষিক রিপোর্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে এই সব অভিযোগ করেছে আফগানিস্তান। তালিবান সরকারের এই সেন্ট্রাল কমিশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিয়ারেন্স অ্যাফেয়ার্সের মাথায় বসে আছেন সন্ত্রাসবাদ দমনের দায়িত্বে থাকা এক প্রতিমন্ত্রী। সম্প্রতি তালিবানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াকুব মুজাহিদের নেতৃত্বে একটি বৈঠকে বসেছিল এই কমিশন। তারপরই প্রকাশিত হয় পাঁচ পাতার এই রিপোর্ট। এর আগে আফগানিস্তানের মাটিতে সাম্প্রতিক পাক এয়ারস্ট্রাইকে ৪৬ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল তালিবান।
তালিবানি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত তিনবছরে যে সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আফগান মাটি থেকে নির্মূল করা হয়েছে, তারাই পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে। 'বিভিন্ন পার্টির' পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ মদতে সেই সব জঙ্গি সংগঠন ফের নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার কাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের জন্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের জন্যে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে জঙ্গিদের। এমনকী বিদেশ থেকে করাচি এবং ইসলামাবাদ হয়ে আরও ভিনদেশের জঙ্গিদের বালোচিস্তানে আনা হচ্ছে বলে বিস্ফোরক দাবিও করেছে তালিবান।