ক্রমেই আফগানিস্তানে বাড়ছে তালিবান দখলদারি। হানা বসাচ্ছে কট্টরপন্থার শ্বদন্ত। আর তার নবতম শিকার এক নিস্পাপ ২১ বছরের তরুণী। তালিবানদের খাতায় তার পাপ একটাই, 'গাড়ির মধ্যে বোরখা না পরে বসেছিল।'
মৃতার নাম নাজানিন। পরিবারের সঙ্গে বালখ জেলা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময়েই গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাকে টেনে বের করে আনে তালিবান জঙ্গিরা। এরপর মা-বাবা, ভাই-বোনের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। বোরখা না পরার 'হারামে'।
তালিবান জঙ্গিনেতা জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ অবশ্য এই দাবি অস্বীকার করেছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন, ব্রিটিশ সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই স্বমূর্তি ধারণ করেছে তালিবানরা। চলছে সাধারণ আফগানবাসীর উপর অত্যাচার। তালিবানরা জানিয়েছে, 'প্রকৃত ইসলামের শাসন' স্থাপন করাই লক্ষ্য তাদের। আর তার জন্য এই অত্যাচারই ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিধান বজায় রাখার একমাত্র উপায়।
ঐতিহ্য বজার রাখার দায় এমনই যে, সিনেমা দেখা বা গান শোনার অপরাধেও বাড়ি ঢুকে হত্যা করা হচ্ছে বাসিন্দাদের।
মেয়েদের স্কুল যাওয়া এমনকি আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে অপ্রমাণিত ব্যভিচারে অভিযুক্ত মহিলাদের স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যার খবর প্রকাশ্যে আসে।
গোষ্ঠীটি এখন মোট ২২৩ টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে। মার্কিন সেনা ভয়ে পালানোর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই এলাকাগুলো তাদের দখলে ছিল। কিন্তু মার্কিন সেনা চলে যেতেই ফের শুরু হয়েছে দমন-নিপীড়ন।
১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েদের পাঠাতে হবে। নয়তো ৪৫ বছরের কম বয়সি বিধবাদের পাঠানো যেতে পারে,' দ্য সান-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে তালিবানদের উচ্চ স্তরের নেতৃত্ব এমনই নির্দেশ পাঠিয়েছে ক্ষুদ্র নেতাদের। বিয়ের জন্য মেয়েদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
এই 'বিয়ে' যে প্রকৃতপক্ষে যৌনদাসী করে রাখারই সামিল, তা বলাই বাহুল্য। বলা হয়েছে, তাদের তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে পাকিস্তানে পাঠানো হবে।
পরিস্থিতি এমনই যে যাঁদের সুযোগ আছে, আফগানিস্তান ছেড়ে কন্যাসন্তান নিয়ে পালাচ্ছেন।
শুধু মহিলাদের দুর্দশা, এমনটাই নয়। ধূমপান ও দাড়ি কামানোর মতো ব্যক্তিগত বিষয়েও জারি হয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। এমনকি গান চালাতেও ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা। কারণ তালিবান টহলদারদের কানে গেলেই মৃত্যু অনিবার্য।
সম্প্রতি ভারতের বিখ্যাত চিত্র-সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকিকে নৃশংসভাবে খুন করে তালিবান। মানুষকে হাসানোর 'হারামের' কারণে হত্যা করা হয় আফগান কৌতুকশিল্পী ফজল মহম্মদ ওরফে খাসা জওয়ানকে।
তালিবানদের যদিও দুষ্কৃতী বলে মানতে নারাজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। চলতি সপ্তাহে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘তালিবানরা দুষ্কৃতি নয়। ওরাও সাধারণ সিভিলিয়ানদের মতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপেই যত সমস্যার সৃষ্টি।’