'ওরা আমাদের এক এক করে খুঁজে বের করছিল। আর তারপর স্রেফ খুন করছিল,' বলছিলেন আসিফ। কাবুল থেকে দিল্লির শেষ বাণিজ্যিক উড়ানে কোনওক্রমে পালিয়ে এসেছেন এই আফগান গোয়েন্দা কর্তা। লাজপত নগরের ছোট্ট ঘরে বসে বলতে বলতে ভয়ে কেঁপে উঠছিলেন আসিফ।
একটা ছোট্ট বাথরুম। সেরকমই ছোট্ট বেসিন। দিনে ৫০০ টাকা ভাড়া। দিল্লিতে আসার পর কোনওমতে এই ঘরটাই জোগাড় করেছেন আসিফ। ফোল্ডিং খাটের উপর বসে দৃশ্যতই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। 'আমার সব শেষ। অসুস্থ মা, বউ, আট বছরের ছোট্ট ছেলেটা, কাউকে আনতে পারলাম না,' কাঁদতে কাঁদতে বললেন ৪১ বছরের গোয়েন্দা আধিকারিক। হাতে তখন ধরা তাঁর পরিবারের ছবি।
কাবুলে তালিবানের 'হিটলিস্টে' ছিলেন গোয়েন্দা আধিকারিকরাও। বাদ যাননি আসিফও। ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটির আধিকারিক জানালেন, 'খুঁজে পেলেই আমায ওরা মেরে ফেলত।'
'হয় আমাদের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ো, নয় তো মৃত্যুবরণ কর,' তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এমনই হুমকি পেয়েছিলেন বলে জানালেন। তবে নীতিবোধ থেকে সরকারের বিরোধিতা করে তালিবানদের দলে যোগ দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেননি আসিফ। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন আসিফ। 'ওরা সব ইন্টারনেট, কলিং সব বানচাল করে দিয়েছে। আমার মা, বউ, ছেলে কেমন আছে, কোথায় আছে, কিচ্ছু জানি না।'
এক মাস আগে ভিসা পান তিনি। দশ দিন আগে তালিবানদের আসার খবর পেয়েই সহকর্মীদের সঙ্গে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। আসার সময়ে ২-৩ দিন কিচ্ছু খাওয়াদাওয়াও হয়নি, জানালেন আসিফ। 'সব শেষ। আর কোনওদিনও দেশে ফিরতে পারব না। এবার এই ৫০০ টাকার ঘর ছেড়ে ২০০-৩০০ টাকার ঘর খুঁজতে হবে। সঞ্চয় তো সীমিত,' ছোট্ট জানলাটার দিকে তাকিয়ে বলছিলেন আসিফ। তাঁর চোখে তখন দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। কেমন আছেন তাঁর স্ত্রী, মা, সন্তান? জানেন না তিনি। জানেন না আফগানিস্তান ছেড়ে পালানো কয়েকশো আধিকারিক, মন্ত্রীরা।