তামিলনাড়ুতে ১৬ বছরের কিশোরীর আত্মহত্যা ঘটনা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। তারইমধ্যে যে ব্যক্তি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর ভিডিয়ো তুলেছিলেন, তাঁকে তদন্তকারী আধিকারিকের সামনে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চ। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য ফোনও জমা দিতে বলেছে হাইকোর্ট।
থানজাভুর পুলিশ আপাতত ওই কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে। তাঁর মৃত্যুর আগে একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) তোলা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। যে ভিডিয়োয় কিশোরীকে বলতে শোনা গিয়েছে, বিনামূল্যে শিক্ষার আশা দেখিয়ে দু'বছর আগে বাবা ও মায়ের কাছে ধর্মান্তকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁর স্কুলের ওয়ার্ডেন। কিশোরীকে উদ্দেশ করে ভিডিয়োয় এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ধর্মান্তকরণে রাজি না হওয়ায় তাঁকে কি হেনস্থা করেছেন স্কুলের ওয়ার্ডেন? তাতে ওই কিশোরীকে বলতে শোনা যায়, ‘হতে পারে’।
ওই কিশোরীর বাবা দাবি করেছেন, তাঁর মেয়েকে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। অত্যাচার চালানো হচ্ছিল। তারপরই আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে। পুলিশের বিরুদ্ধে চাপ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন ওই কিশোরীর বাবা। সেই পরিস্থিতিতে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
সোমবার সেই মামলার রায়ে বিচারপতি জি আর স্বামীনাথন জানান, মৃত কিশোরীর বাবা এবং মা ধর্মান্তকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্তকারী আধিকারিকও আদালতে জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে যে কণ্ঠস্বর শোনা হচ্ছে, তা ওই কিশোরীর। বিচারপতি বলেন, ‘অন্য ভাষায় বলতে গেলে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছে এই ভিডিয়োর সত্যতা। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। উপযুক্ত ফরেন্সিক পরীক্ষা করতে হবে। তাই যে মোবাইল ফোনে ভিডিয়োটি রেকর্ড করা হয়েছে, সেটা দরকার।’ যে ব্যক্তি ভিডিয়ো তুলেছেন, তাঁকে মঙ্গলবার হাজিরা দিতে বলেছে হাইকোর্ট। আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে চেন্নাইয়ের তামিলনাড়ু ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবকে মোবাইলের ফরেন্সিক রিপোর্ট তৈরি করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। যা মামলার পরবর্তী শুনানিতে (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টে জমা দিতে হবে।
তারইমধ্যে পুরো ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরই জোর করে ধর্মান্তকরণের বিরুদ্ধে বিজেপি এবং একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন প্রতিবাদে সরব হয়েছে। দাবি তোলা হয়েছে সিবিআই তদন্তের। টুইটারেও ট্রেন্ডিং হচ্ছে। বিজেপি নেতা এইচ রাজা দাবি করেন, দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ৫০০-র মধ্যে ৪৮৯ নম্বর পেয়েছিলেন কিশোরী। 'ওরা (স্কুল) তিনবার (কিশোরীর) বাড়িতে গিয়েছিল। ধর্মান্তকরণ করলে বিনামূল্যে শিক্ষার বন্দোবস্ত করা হবে বলে মগজধোলাই করা হয়েছিল।' কিন্তু ধর্মান্তকরণে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে শৌচাগার এবং শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ করেন বিজেপি নেতা।
কংগ্রেসের দাবি, ওই স্কুলে ৭০ শতাংশ হিন্দু, পাঁচ শতাংশ মুসলিম, এবং ২৫ শতাংশ খ্রিস্টান পড়ুয়া আছে। গত তিন শতকে স্কুলে ধর্মান্তকরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এখন কেন হবে? তামিলনাড়ু এরকম ঘৃণার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বলে বিজেপিকে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অম্বিল মহেশ পোয়ামোঝি জানিয়েছেন, স্কুলে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং জাতপাত সংক্রান্ত বিভেদের পক্ষে নয় তামিলনাড়ু। সেইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।