দিন কয়েক আগের ঘটনা। রাজ্যের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে পদক্ষেপ করুক ভারত সরকার। প্রধানমন্ত্রী বা বিদেশমন্ত্রী - কেউ একজন অন্তত দেশবাসীকে জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কী পদক্ষেপ করছে নয়া দিল্লি!
এমনকী, বাংলাদেশে যাতে রাষ্ট্রসংঘের তরফে শান্তিবাহিনী পাঠানো হয়, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেই বিষয়েও উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানান মমতা।
আর এবার, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত সরকার এবং কেন্দ্রের প্রধান শাসকদলের অবস্থান জানতে চেয়ে সরাসরি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডাকে প্রশ্নবাণ ছুড়লেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়।
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ইস্যুতে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন তথাগত। তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানে তিনি মোটেও সন্তুষ্ট নন।
তথাগতর অভিযোগ, 'বাংলাদেশে ইসলাম কট্টরপন্থী ও জঙ্গিদের হাতে হিন্দুদের খুন হতে হচ্ছে, অত্যাচারিত হতে হচ্ছে। অথচ, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করছে না ভারত সরকার কিংবা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।'
তথাগত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বিজেপির একজন প্রাক্তন কার্যকর্তা হিসাবে তাঁর পক্ষে এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর।
এরপরই বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হিন্দু তথা সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য সরাসরি 'আসারুল্লাহ বাংলা টিম, হেফাজতে ইসলাম, জামাতে ইসলাম, হিজবুত তাহির'-এর মতো ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে বিএনপি-র যোগসাজশকে দায়ী করেন তথাগত।
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, 'ওই দেশটি (বাংলাদেশ) খুব দ্রুত একটি তালিবানি রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। একটি অরাজক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। হিন্দু অধ্যুষিত গোপালগঞ্জ জেলায় মহিলাদের বাজারে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা (ফতোয়া) জারি করা হয়েছে। সারা বিশ্ব এদিকে নজর রাখছে। আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে প্রতিবাদের বার্তা আসছে।'
তথাগতর আরও অভিযোগ, এই প্রেক্ষাপটে কট্টরপন্থী মুসলমানরা পালটা প্রচার চালাচ্ছে। তারা হিন্দুদের ভয় দেখাচ্ছে এবং একইসঙ্গে সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, সেখানে হিন্দুরা খুব ভালো আছে।
এরপরই একেবারে ব্যক্তিগত আবেগের জায়গা থেকে সরাসরি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতিকে লক্ষ করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তথাগত রায়। লিখেছেন, 'আমি ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি হিন্দু। আমার পূর্বপুরুষরা ব্রাহ্মণবেড়িয়া থেকে এসেছিলেন। সেটা এখন বাংলাদেশের অংশ। আমার যন্ত্রণা শুধুমাত্র কল্পনা করাই সম্ভব। এবার কী হবে?'
এই দীর্ঘ পোস্টের একেবারে শেষে তোলা এই প্রশ্নের পরই এস জয়শঙ্কর এবং জে পি নড্ডাকে ট্যাগ করেছেন তথাগত রায়।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই ভারতের তরফে একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের জানানো হয়েছে, আগামী ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রী।