অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্টফোন কিনতে পারছিল না পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। বেছে নিয়েছিল আম বিক্রয়ের পেশা। তাতেই ১২ টি আম তার ভাগ্য ফেরাল। রাস্তার ধারে ফুটপাথে বসে বছর বারোর এক কিশোরীকে আম বিক্রি করতে দেখে মন গলে গেল মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ী ‘কাকুর’। জামশেদপুরের বাসিন্দা ওই কিশোরীর কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যে এক ডজন আম কিনে নজির গড়লেন মুম্বইয়ের সেই কাকু! ওই কিশোরী যাতে স্মার্ট ফোন কিনে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য প্রত্যেকটি আম ১০ হাজার টাকায় কিনে নেন তিনি। বুধবার তার বাবা শ্রীমল কুমারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে দেন মুম্বইয়ের অমেয় হেটে নামের ওই ব্যবসায়ী।
তবে ঝাড়খণ্ডের জমশেদপুরের প্রত্যান্ত গ্রামে ওই কিশোরী পর্যন্ত পৌঁছনো মুম্বইয়ের কাকুর কাছে অতটা সহজ ছিল না। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তুলসি কুমারী নামের ওই কিশোরীর গরীবির সঙ্গে লড়াইয়ের কাহিনী সম্প্রচারিত করা হয়। সেই সূত্র ধরেই মুম্বইয়ের ভ্যালুয়েবল এডুটেন্মেন্টের কর্ণধার অমেয় মেটে তুলসির ব্যপারে জানতে পারেন। তিনি ওই চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিশোরীকে সাহায্য করার বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। শেষে ওই টিভি চ্যানেলের সাহায্যে মুম্বইয়ের কাকু পৌঁছে যান জামশেদপুরের কিশারীর কাছে। তারপর ছোট্ট তুলসির হাতে ১৩ হাজার টাকা দামের স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট রিচার্জ করে দিয়েছেন তিনি। ওই ব্যবসায়ী এ-ও আশ্বাস দিয়েছেন যে, যাতে ওই কিশোরীর পড়াশুনায় ছেদ না-পড়ে, তার জন্য বছরভর তিনিই নেটের ব্যবস্থা করবেন। হাতে ফোন পেয়ে বেজায় খুশি হয়ে তুলসিও জানিয়েছে, এবার থেকে সে পড়াশুনায় মন দেবে। তার বাবা-মাও মেয়েকে নিয়ে গর্বের সীমা নেই।
বাবা শ্রীমলও মেয়েকে পড়াশুনা শিখিয়ে বড় করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তুলসির মা পদ্মীনীদেবী মেয়ের আম বিক্রি করার পেশাকে পছন্দ করেন না বলেই জানিয়েছেন। তবে তুলসির বাবা মা আশাবাদী যে, তার মেয়ের শিক্ষায় এবার আর কোনও বাধা আসবে না।
অমেয় হেটে বলেন, ‘ তুলসি অত্যান্ত পরিশ্রমী পড়ুয়া। আমাদের দেওয়া সাহায্যে সে যদি নিজের পড়াশুনা শেষ করতে পারে, তাহলে আমরা খুশি হব। ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজন পড়বে, তখনই আমরা সাহায্য করে যাব।’
করোনা ও লকডাউ পড়ুয়াদের শিক্ষা ব্যবস্থার এনেকটাই বদল ঘটিয়েছে। এখন স্কুলের বেশিরভাগ পড়াশুনা অনলাইনের মাধ্যমেই সম্পন্ন করছে স্কুলগুলো। সেখানে দরিদ্র পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের ইন্টারনেটের অভাবে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে অক্ষম হচ্ছেন। সেখানে এই ব্যবসায়ীর উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছে শিক্ষা মহলও। তাদের মতে, এই ধরনের মানবিকতা নিয়ে মানুষ এগিয়ে আসলে, অনেক দ্ররিদ্র শিশুর পড়াশুনা মাঝ পথে বন্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।