সিঙ্গল পেরেন্ট বা একক অভিভাবকদের বিরাট স্বস্তি দিল তেলঙ্গনা হাইকোর্ট। একটি মামলার প্রেক্ষিতে আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, সিঙ্গল পেরেন্ট অর্থাৎ, সেই বাবা অথবা মা - যাঁরা এককভাবে সন্তানের কাস্টডি পেয়েছেন বা সন্তানের ভরণপোষণ করছেন, তিনি চাইলে এককভাবেই সন্তানের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করতে পারেন এবং সেই পাসপোর্ট পেতে পারেন। এর জন্য তাঁকে তাঁর প্রাক্তনের কাছ থেকে স্বাক্ষর বা অনুমতি নিতে হবে না।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় মামলাকারী হল ৪ (চার) বছরের এক শিশু। সেই ছোট্ট মেয়েটির হয়ে আদালতে মামলাটি রুজু করেছেন তার মা।
মামলায় জানানো হয়, বাচ্চাটির মা তার জন্য পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। তাঁকে বলা হয়, বাচ্চার পাসপোর্ট পেতে গেলে বাচ্চার বাবার অনুমতি স্বরূপ তাঁর স্বাক্ষর জোগাড় করে আনতে হবে।
এই মামলার শুনানি হয় তেলঙ্গনা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের এজলাসে। আদালত পাসপোর্ট অফিসের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেয়, একজন সিঙ্গল পেরেন্ট চাইলে এককভাবেই তাঁর সন্তানের জন্য পাসপোর্ট তৈরির আবেদন জানাতে পারেন। তার জন্য প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর অনুমতি কিংবা স্বাক্ষর নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
বিচারপতি ভট্টাচার্য তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, এই ধরনের নিয়ম বাচ্চাটির মায়ের উপর এক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। যা অপ্রয়োজনীয়। প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট মামলাটি রুজু করা হয়েছিল ওই এলাকার রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস (আরপিও)-এর একটি চিঠি চ্যালেঞ্জ করে।
৪ বছরের ওই শিশু এবং তার মায়ের হয়ে আদালতে মামলাটি লড়েন আইনজীবী জীশান আদনান মেহমুদ। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, ওই শিশুর বাবা তাকে এবং তার মাকে ছেড়ে আমেরিকা চলে গিয়েছেন এবং তিনি ভারতের নাগরিকত্বও পরিত্যাগ করেছেন।
ওই ব্যক্তি তাঁর মেয়ের হয়ে তাঁর বিচ্ছিন্না স্ত্রীর রুজু করা এই মামলার বিরোধিতাও করেননি। যদিও আইনত এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ এখনও পর্যন্ত হয়নি। তাঁদের ডিভোর্স মামলা এখনও আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলা হায়দরাবাদেরই অন্য একটি আদালতে চলছে। কিন্তু, সেখানেও শিশুটির বাবা আদালতের কাছে তার কাস্টডি চায়নি।
এরপরই বিচারপতি ভট্টাচার্য ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট আইন এবং ১৯৮০ সালের পাসপোর্ট নীতিসমূহের স্পষ্ট ব্যাখ্য়া করেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে, কোনওভাবেই একজন সিঙ্গল পেরেন্টের তাঁর সন্তানের জন্য পাসপোর্ট তৈরি করানোয় কোনও বাধা নেই।
পাশাপাশি, ১৯৮০ সালের নীতিসমূহ অনুসারে, একজন সিঙ্গল পেরেন্ট তাঁর প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই সন্তানের জন্য পাসপোর্ট তৈরির আবেদন জানাতে পারেন। এমনকী, এক্ষেত্রে যদি ওই দম্পতির মধ্যে আইনত ডিভোর্স নাও হয়ে থাকে, কিন্তু তাঁরা আলাদা-আলাদাভাবে থাকেন, তাহলেও এই নীতিসমূহ কার্যকর হয়।
এখানে শুধুমাত্র যেটা অবশ্যপালনীয়, তা হল - সংশ্লিষ্ট সিঙ্গল পেরেন্টকে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য সরবরাহ করতে হবে।