সারাদিনে দু’টাকা রোজগার করতে কালঘাম ফেলতে হয়। কোনও আপদ–বিপদ হলে বেশ চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। কারণ অর্থের অভাব। আর এই অর্থের অভাবের জেরেই সংসারে অনটন লেগেই রয়েছে। হ্যাঁ, এভাবেই চলে একজন দিনমজুরের সংসার। কাজ করে যে টাকা উপার্জন হয় তাতে সংসারের অভাব মেটে না। বরং সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। অভাব নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ানোয় সুখের কথা মাথাতেও আনতে পারেন না জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু। আসলে তাঁর জীবনে ‘আচ্ছে দিন’ আসেনি। তাই তো তেলাঙ্গানার ভাণ্ডারি কোঠাগুদেম জেলার চন্দ্রগুণ্ডার বাসিন্দা জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু কষ্টের মধ্যেও মুখে হাসি রাখেন। কিন্তু এবার সেই হাসিটাও উধাও হয়ে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি নোটিশে।
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তবে ঘটেছে। কদিন আগে একটি নোটিশ এসেছে ওই জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালুর কাছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু ২২ লাখ ৮৬ হাজারেরও বেশি টাকার জিএসটি বাকি রেখেছেন। এই নোটিশ একদিকে যেমন বেদনাদায়ক অপরদিকে গরিবের কাছে উপহাসেরও বটে। দীনদরিদ্র জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু এতে অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। ঈশ্বরের কাছে বলছেন, আর কত আঘাত সহ্য করতে হবে! তবে এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করে জানা গিয়েছে, যে সংস্থার কথা নোটিশে উল্লেখ করে এই বিপুল পরিমাণ কর চাওয়া হয়েছে সেটার কোনও অস্বস্তিই নেই।
আরও পড়ুন: দিনমজুর পরিবার দ্বারস্থ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে, মেয়ের বিয়ে মেটার পর মিলল রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা
জিএসটি অফিসের কাছে এসবের কি কোনও খোঁজ নেই? উঠেছে প্রশ্ন। বিজয়ওয়ারার বাণিজ্যিক কর দফতরের সহকারি কমিশনারের পাঠানো নোটিশে এখন ঘন অন্ধকার নেমে এসেছে জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালুর জীবনে। ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালুর একটি কোটি টাকার সংস্থা আছে। ওই সংস্থার নাম ‘ভাগ্যলক্ষ্মী এন্টারপ্রাইজ।’ আর এই সংস্থা ২০২২ সাল থেকে ব্যবসা করছে। জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু এই সংস্থার মালিক। জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালুর ওই বিপুল পরিমাণ জিএসটি কর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দেননি বলেই এই নোটিশ।
এমনটা যে ঘটতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবেননি জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু। গত ৪ মার্চ এই নোটিশ জীবন তোলপাড় করে দিয়েছে জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালুর। মজুরির কাজ করে যো ব্যক্তি কোনওরকমে সংসার চালান এখন সেসব ফেলে তাঁকে ছুটতে হচ্ছে সরকারি দফতরে। প্রমাণ করতে হচ্ছে এসব মিথ্যে। ফলে আরও আর্থিক সংকটে পড়েছেন জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু। সরকারি অফিসারদের জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালু বলছেন, তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালান। কোটি টাকা সংস্থা থাকলে এত কষ্টে তিনি থাকবেন কেন? জনপতি ভেঙ্কটেশ্বরালুর আধার কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে কেউ এটা করেছে বলে তাঁর ধারণা। এমনকী জাল প্যান কার্ড তৈরি করিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। এখন তাঁর দাবি, তদন্ত করে দেখতে হবে প্রশাসনকে কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত?