জঙ্গলমহলের ত্রাস ছিল সে। তার দাপটে রাজনৈতিক নেতারাও কাঁপতেন। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে বিশ্বাসী সেই মাওবাদী নেতাকে রক্ত দিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছিল। হ্যাঁ, কিষেণজি নামেই পরিচিত ছিল সে। এবার ১৩ বছর পর পুলিশের জালে ধরা পড়লেন প্রয়াত মাওবাদী নেতা মাল্লেজুল্লা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির স্ত্রী। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। গ্রেফতার করা হল কিষেণজির স্ত্রী তথা মাওবাদী নেত্রী পোথুলা কল্পনাকে। কিষেণজির মতোই সাংঘাতিক অপারেশনে দক্ষ এই মাওবাদী নেত্রী। এই মাওবাদী নেত্রীর আর একটি নাম আছে—সুজাতা। এটা সকলের জানা নেই।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তেলাঙ্গানা পুলিশের স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ ঝাঁপিয়ে পড়ে সেখানে। তারপর গোপন ডেরা থেকে কিষেণজির স্ত্রী তথা মাওবাদী নেত্রী পোথুলা কল্পনা ওরফে সুজাতাকে গ্রেফতার করা হয়। মাওবাদী সংগঠনের সাউথ সাব জোনাল ব্যুরোর ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন পোথুলা কল্পনা ওরফে সুজাতা। ২০১১ সালে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় কিষেনজির। তখন থেকে গা–ঢাকা দেয় সুজাতা। এবার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাওবাদী সংগঠনের পলিটব্যুরোর সদস্য ছিল কিষেণজি। তেলাঙ্গানা পুলিশ সূত্রে খবর, কিষেণজির স্ত্রী সাউথ সাব জোনাল ব্যুরোর ইনচার্জ হয়ে কাজ সামলাচ্ছিল। এখন বয়স ৬০। এবার খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘ভোটের কার্নিভালে আসুন’, ডাক্তারদের এবং সিপিএমকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন কুণাল
কিষেণজির স্ত্রী সুজাতা একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ। তাতে মানুষের জীবনের ক্ষতি হয়েছিল। সূত্রের খবর, এই সুজাতা দু’হাতে গুলি চালাতে অত্যন্ত দক্ষ। বহুদিন ধরে সুজাতার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। খবর আসছিল বাংলায় নেই কিষেণজির স্ত্রী। তখন থেকেই ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা–সহ নানা রাজ্যে খোঁজ শুরু করেছিল পুলিশ। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর এনকাউন্টারে নিকেশ হয় মাওবাদী নেতা কিষেণজি। তারপর থেকে নানা রাজ্যে গা–ঢাকা দিয়েছিল সুজাতা। বেশ কিছুদিন আগে তেলাঙ্গানায় চলে আসে কিষেণজির স্ত্রী।
পুলিশ সূত্রে খবর, কিষেণজির স্ত্রী তেলাঙ্গানার বাসিন্দা। তেলাঙ্গনার গ্রামীণ এলাকা জগুলাম্বা গাড়োয়াল জেলার পেঞ্চিকালপেট গ্রামে থাকত সুজাতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক উত্তীর্ণ। সমাজ পাল্টাতে কাঁধে তুলে নিয়েছিল রাইফেল। তারপর চলেছে একের পর এক রক্তক্ষয়ী অপারেশন। কিষেনজির জন্মস্থান তেলাঙ্গনার করিমনগর জেলার পেদাপল্লী গ্রামে। কিষেণজির হাত ধরেই মাওবাদী নেত্রী হয়ে ওঠে পোথুলা কল্পনা ওরফে সুজাতা। কিষেণজি যখন জঙ্গলমহলে এনকাউন্টারে মারা যায় তখন মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন মনোজ ভার্মা। যিনি এখন কলকাতা পুলিশ কমিশনার। তারপর থেকে সুজাতা–সহ মাওবাদীদের একাধিক শীর্ষনেতাকে খুঁজছিল কেন্দ্রীয় যৌথবাহিনী। এবার সুজাতাকে নাগালে পেল পুলিশ।