চাঁদের জমি কিনে ঘরে আনলেন বাংলাদেশের দম্পতি! সরাসরি চাঁদের জমি কেনার দাবি করলেন কানাডার বাসিন্দা আদতে বাংলাদেশি দম্পতি। তাও এক'দু কাঠা নয়, একেবারে ১০ একর! এমনকী, তাঁদের কাছে জমির ছবিও আছে বলে দাবি করেছেন অখিল রায় ও অনুপা হালদার।
এই দম্পতির দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশি দম্পতি দাবি করেছেন, গত শনিবার তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'লুনার এম্ব্যাসির' নামের একটি সংস্থার কাছ থেকে ১০ একর জমি কিনেছেন। আদতে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হলেও এই দম্পতি কর্মসূত্রে কানাডায় থাকেন। বেশ কিছুদিন আগে অখিলবাবু জানতে পারেন যে চাঁদের জমি বিক্রি হচ্ছে। দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরাও চাঁদের জমি কিনবেন। তখনই তারা লুনার হোপের সংস্থা লুনার এম্ব্যাসির কাছ থেকে জমি কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
প্রসঙ্গত, চাঁদে কীভাবে জমি কিনতে হয়, কোনও ব্যক্তির পক্ষে চাঁদে জমি কেনা সম্ভব কিনা, এ সম্পর্কিত তথ্য খোঁজার গতিও বেড়ে গেছে। তবে প্রশ্ন হল- আসলেই কি চাঁদে জমি কেনা যায়? কীভাবে সম্ভব? এটা কি বৈধ?
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী চাঁদ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যেহেতু এখন অনেকেই চাঁদে এক টুকরো জমির মালিকানার কথা ভাবছেন, তাই জেনে রাখা ভাল যে, চাঁদে জমি বিক্রি অবৈধ।
১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারিতে এই সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। ‘দ্য আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামক এই চুক্তি আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। চুক্তিতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে সেগুলো কোনও দেশ দখল বা নিজেদের একক সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না।
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ১১০টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তার মধ্যে ২৩টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও করোনার কারণে সভা অনুষ্ঠিত না হওয়ায়, তাঁদের স্বাক্ষর অনুমোদনের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
১৯৭৯ সালে চাঁদ ও মহাশূন্যের অন্যান্য গ্রহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ, যেটি ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। সেখানে মূল বিষয়গুলো ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে এসব কাজ সম্পন্ন করতে হবে। শুধু তাই নয়, কোনও মহাকাশ স্টেশন বানাতে হলে, আগে জাতিসংঘকে জানাতে হবে। ওই চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, চাঁদ এবং এর যে কোনও প্রাকৃতিক সম্পত্তিতে মানব সভ্যতার সবার সমান অধিকার থাকবে। তবে সমস্যা হল, মাত্র ১১টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়ার মতো মহাকাশ গবেষণার প্রধান দেশগুলো চুক্তিটি সমর্থন করেনি।
অভিযোগ উঠেছে, এই চুক্তির ফাঁককে কাজে লাগিয়ে চাঁদে জমি বিক্রি হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে চুক্তির একটি ফাঁক খুঁজে বের করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। চুক্তিতে লেখা ছিল, কোনও রাষ্ট্র চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না। কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে, কোনও সাধারণ মানুষ মালিকানা দাবি করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কেউ চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না, বা চাঁদকে নিজের সম্পত্তি মনে করা যাবে না। যদিও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। তারা চাঁদে জমি বা প্লট বরাদ্দ করছে । কিন্তু এই জমির ভবিষ্যৎ কি তা স্পষ্ট নয়। এরপরও চাঁদে জমি কেনার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ক্রেতাদের।