কর্ণাটক নির্বাচনের আগে দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল 'দ্য কেরালা স্টোরি' নিয়ে। সেই বিতর্কের ভরপুর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিল গেরুয়া শিবির। এই আবহে কর্ণাটকে প্রচারে এসে বেঙ্গালুরুর সিনেমা হলে সিনেমাটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তবে সে সব প্রয়াসই মাঠে মারা গেল। মেরুকরণের অঙ্কে কর্ণাটকের ভোটতরী পার করাতে পারেনি পদ্ম শিবির। বেশ কয়েক বছরের একাধিক রেকর্ড ভেঙে কর্ণাটকে সরকার গঠন করতে চলেছে হাত শিবির। এই আবহে টুইটারে নেটিজেনদের খোঁচার মুখে বিজেপি। আর তা থেকেই ভাইরাল হয়েছে একটি রাজনৈতিক 'মিম'।
ভাইরাল হওয়া মিমের মধ্যে 'খাকি প্যান্ট পোড়ার' ছবিটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে বিজেপি বিরোধী নেটিজেনদের মধ্যে। তাতে দেখা গিয়েছে, একটি খাকি হাফপ্যান্টে আগুন ধরে গিয়েছে। যে ধরনের প্যান্ট আরএসএস ক্যাডাররা পরেন, সেই ধরনের প্যান্ট দেখানো হয়েছে ছবিতে। এর সঙ্গে ছবিতে লেখা - 'দ্য সাউথ ইন্ডিয়ান স্টোরি'। এদিকে আরও একটি মিম ভাইরাল হয়েছে বিজেপির হারে। তাতে দক্ষিণ ভারতের মানচিত্র আঁকা। সেই ছবিতে লেখা - 'দক্ষিণ ভারত চিরকাল স্বাধীন থাকবে'। সিনেমার পোস্টারের মতো সেই ছবিতে আরও লেখা - 'সত্যি রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি' এবং 'পরিচালনায় দক্ষিণ ভারতীয়রা'। উল্লেখ্য, দক্ষিণ ভারতে একমাত্র কর্ণাটকেই ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। বাকি কোনও রাজ্যেই সেভাবে এখনও নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। তবে কর্ণাটকে হারায় এখন দক্ষিণ ভারতের কোনও রাজ্যেই বিজেপির সরকার থাকল না।
কর্ণাটকে এবারে ভোটে ভোক্কালিগা ভোট কংগ্রেসের খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে কর্ণাটকে। কর্ণাটকের মোট জনসংখ্যার মধ্যে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় ১৭ শতাংশ। তারপরই রয়েছে ভোক্কালিগা। তারা ১১ শতাংশ। মূলত দক্ষিণ কর্ণাটকে মাইসোর অঞ্চলে ভোক্কালিগাদের বাস। ঐতিহাসিক ভাবে ১৯৯৯ সাল থেকে ভোক্কালিগারা জেডিএস-কেই ভোট দিয়ে আসছে। তবে ২০১৮ সালে দক্ষিণ কর্ণাটক বা মাইসোর অঞ্চলে বেশ ভালো ফল করেছিল বিজেপি। সেবারে ভোক্কালিগা অধ্যুষিত এলাকায় ডবল ফিগারে আসন লাভ করেছিল বিজেপি। তবে এবার সেই আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ৬-এ। তবে সেই অর্থে এই অঞ্চলে ভোট শতাংশ কমেনি বিজেপির। তবে এই অঞ্চলে জেডিএস-এর একটা বড় অংশের ভোট গিয়েছে কংগ্রেসের দিকে। এর জন্যই এই অঞ্চলে ৩৭টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। এই অঞ্চলে আগেরবার যেখানে জেডিএস জিতেছিল ২৬টি আসন, তারা এবার এই অঞ্চলে পেয়েছে মাত্র ১৪টি আসন।
এদিকে দক্ষিণের মতো মধ্য কর্ণাটকেও এগিয়ে কংগ্রেস। এই অঞ্চলে ৭টি আসনে বিজেপি জয়ী। ২৪টি আসনে জয়ী কংগ্রেস। হায়দরাবাদ-কর্ণাটকেও অনেকটাই এগিয়ে কংগ্রেস। এই অঞ্চলে কংগ্রেস জিতেছে ২০টি আসনে। ৬টি আসনে জয়ী বিজেপি। এই অঞ্চলে জেডিএস ৩টি আসনে জয়ী। এদিকে কর্ণাটকে সার্বিক ভাবে পিছিয়ে পড়লেও বেঙ্গালুরু এলাকায় কংগ্রেসকে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। এই অঞ্চলের ১৫টি আসনে এগিয়ে বিজেপি। কংগ্রেস এগিয়ে ১৭টি আসনে। এছাড়া উপকূলীয় কর্ণাটকে অবশ্য এগিয়ে বিজেপি। এই অঞ্চলে ১৪টি আসনে এগিয়ে বিজেপি। ৬টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। এই অঞ্চল থেকেই সূচনা হয়েছিল হিজাব বিতর্কের। অপরদিকে উত্তর কর্ণাটকে বিজেপি অনেকটাই জমি হারিয়েছে। এই অঞ্চলে ৩১টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। বিজেপি জিতেছে মাত্র ১৬টি আসনে।