আফগানিস্তানের আমজনতার স্বার্থে, তাঁদের মানবাধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত কাজে যাতে ইরানের চাবাহার বন্দরের ভারতীয় টার্মিনালটি ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে কাবুলে তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদের দলের বিস্তারিত আলোচনা চলছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একথা জানানো হয়েছে। বস্তুত, চলতি সপ্তাহে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের আলোচনায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলির মধ্যে এই বিষয়টি ছিল অন্যতম।
উল্লেখ্য, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিভাগের যৌথ সচিব জে পি সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই কাবুলে পৌঁছেছে।
সেই দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তালিবান সরকারের কার্যনির্বাহী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুব, কার্যনির্বাহী বিদেশ মন্ত্রী আমির খান মুত্তাগি এবং আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে পুনরায় তালিবান শাসন কায়েম হওয়ার পর এই প্রথম সরকারিভাবে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রয়াত সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা ওমরের ছেলে ইয়াকুব।
অন্যদিকে, চলতি বছর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কাবুল সফরে গেলেন জে পি সিং। গত কয়েক বছরে মুত্তাগির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন তিনি।
ভারত-আফগানিস্তানের বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বৃহস্পতিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, 'আফগানিস্তানে বসবাসকারী ব্যবসায়ীরা যাতে আমদানি ও রফতানির জন্য চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারেন, সেই নিয়ে আলোচনা চলছে।'
উল্লেখ্য, ভারতের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চাবাহার বন্দরে একটি টার্মিনাল পরিচালনা করে। যার মাধ্যমে গত কয়েক বছরে আফগানিস্তানে পণ্য রফতানি করা হয়েছে। ক্রেন বসানো থেকে শুরু করে এই টার্মিনাল নির্মাণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকেছেন জে পি সিং।
রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, এবারের কাবুল সফরে (৪-৫ নভেম্বর) জে পি সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি-সহ একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
জয়সওয়াল বলেন, 'আফগানিস্তানকে মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান করা আমাদের কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য।'
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে অসংখ্য মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত পণ্য পাঠিয়েছে ভারত। যার মধ্যে রয়েছে - ৫০ হাজার টন গম, ৪০ হাজার লিটার ম্যালাথিয়ন কীটনাশক, ৩০ টন ওষুধ এবং ২৮ জন ভূমিকম্পের ত্রাণ সামগ্রী।
জয়সওয়াল বলেন, 'আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আফগানিস্তানের মানুষের পাশে থেকেছি এবং আগামী দিনেও আফগানিস্তানের প্রতি আমাদের এই সহযোগিতা বজায় থাকবে।'
উল্লেখ্য, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতোই ভারতও আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। বস্তুত, তালিবানের পুনরুত্থানের পর ভারত কাবুল থেকে তার সমস্ত কূটনীতিককে ফিরিয়ে আনে।
তবে, ২০২২ সালের জুন মাসে কাবুলে একটি 'টেকনিক্যাল টিম' পাঠায় ভারত। তারপর থেকে সেদেশের রাজধানী শহরে সরকারিভাবে ভারতের উপস্থিতি পুনরায় দেখা যাচ্ছে।
এর পরবর্তী সময়ে একাধিকবার কাবুলে এবং অন্য দেশের মাটিতেও তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ হয়েছে।