অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। কয়েক হাজার কোটি মালিক থেকে রাতারাতি পতন। ১১ বছরের জেল হল থেরানোসের সিইও-প্রতিষ্ঠাতা এলিজাবেথ হোমসের। কিন্তু কী এমন করেছিলেন এই মার্কিন ব্যবসায়ী?
বেশি রক্ত নিতে হবে না। মাত্র ১ ফোঁটাই যথেষ্ট। আর তাতেই এসে যাবে সম্পূর্ণ ব্লাড রিপোর্ট। এমনই অভাবনীয় প্রযুক্তি আবিষ্কারের দাবি করেছিলেন থেরানোসের সিইও এলিজাবেথ হোমস।
এই প্রযুক্তি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলেছিলেন বিনিয়োগকারীদের থেকে। বহু বছর ধরে ক্রমেই আরও টাকা তুলতে থাকেন বাজার থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সব-ই ভুয়ো! এমন কোনও প্রযুক্তিই নেই থেরানোসের ঝুলিতে। আরও পড়ুন: 'লোকসানে'র জন্য কর্মী ছাঁটাই করে মেসিকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করল Byju's
কারবার ভালই চলছিল। একের পর এক মিথ্যা ডেমো, ভিত্তিহীন প্রোডাক্ট দেখিয়ে বাজার থেকে বিপুল টাকা তুলে চলেছিলেন এলিজাবেথ। ২০০৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছিলেন। এদিকে আসল যে প্রোডাক্ট, তাতে মোটেও সঠিকভাবে রক্তপরীক্ষা হত না। তা সত্ত্বেও বার বার বহু বিনিয়োগকারীর থেকে মোটা টাকা তুলেছিলেন তিনি। অবস্থা এমন দাঁড়ায় ফোর্বসের থার্টি আন্ডার থার্টির তালিকাতেও চলে আসে তাঁর নাম। নেট ওয়ার্থ দাঁড়ায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তদন্তে গোটা বিষয়টি উঠে আসে। তাতে বলা হয়, এলিজাবেথ খুব ভাল করেই জানতেন যে থেরানোসের রক্ত পরীক্ষা সঠিক নয়। তা সত্ত্বেও মিথ্যা কথা বলে তিনি বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা তুলে চলেছিলেন।
এদিকে রক্ত পরীক্ষা বিষয়টি যে কতটা গুরুতর, তা কারও অজানা নয়। আর সেই কারণে, এই ভিত্তিহীন প্রোডাক্টের বিক্রিবাটাও হয়নি বাজারে। কোনওদিনই আয়ের মুখ দেখতে পারেনি সংস্থা।
আদালত এলিজাবেথকে চারটি অপরাধমূলক জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সব্যস্ত করেছে।
বর্তমানে তিনি গর্ভবতী। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক। এরপর অবশ্য তাঁকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসের জেলা আদালত। এলিজাবেথ হোমসের আইনজীবী অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
সাজা ঘোষণার কয়েক মুহূর্ত আগে আদালতে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলেন এলিজাবেথ হোমস। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, 'থেরানোসের ব্যর্থতার দায় নিতে আজ আমি আপনাদের সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি থেরানোসকে ভালোবাসতাম। এটি আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল।' তিনি আরও বলেন, 'আমি এই বিরাট ব্যর্থতায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছি। আমার ব্যর্থতার কারণে যে এত মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, সেটা ভেবেই গত কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি।'