গত বুধবার করোনা সংক্রমণে তিনসুকিয়ার বর্ষীয়ান চিকিৎসক পি কে শর্মার মৃত্যুর পরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ঢল নেমেছিল। কিন্তু তাঁর দেহ সৎকার করার সময় লোক না পেয়ে শেষে পাঁচ স্বেচ্ছাসেবকের উপরে নির্ভর করতে হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
পিপিই কিটে মোড়া কলেজপড়ুয়া ওই পাঁচ তরুণ চিকিৎসকের শেষকৃত্যের পরে আপাতত কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। সোয়্যাব পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে তাঁরা ফের এই রকম কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। জনসেবামূলক এই পদক্ষেপে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছে অসম সরকারের তৈরি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ‘প্রতিরোধী বন্ধু’।
তিনসুকিয়া জেলার ডেপুটি কমিশনার ভাস্কর পেগু জানিয়েছেন, ‘এই প্রথম আমাদের জেলায় কোনও কোভিড রোগীর সৎকার করা হল। পুরকর্মীরা আপত্তি জানালে আমরা প্রতিরোধী বন্ধুদের অনুরোধ জানাই এবং পাঁচ তরুণ এই কাজে উদ্যোগী হলেন।’
অসমে কয়েক মাস আগে অতিমারীর প্রকোপ শুরু হলে প্রথম সারির স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন অনুভব করে প্রশাসন। একই সঙ্গে প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যার শিকার হয় বলে গ্রামাঞ্চলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রয়োজন অনুভব করা যায়।
সেই উদ্দেশে এপ্রিল মাসে করোনা সংক্রান্ত কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবক চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অসম সরকার। তাতে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়ে মাত্র ৪ দিনে আবেদন জানান ১৬,০০০ জন, জানিয়েছেন অসম বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের রাজ্য প্রকল্প ব্যবস্থাপক পঙ্কজ চক্রবর্তী। এঁদের মধ্যে অধিকাংশ ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক পড়ুয়া এবং কর্মহীন যুবক হলেও অন্যান্য পেশার মানুষও দরখাস্ত করেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় অলিম্পিক বক্সার শিবা থাপা।
সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ন্যুনতম ১০ দিন থেকে ৬০ দিনের মেয়াদে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ করা হয়। Covid-19 সম্পর্কে অনলাইনে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য, কাউন্সেলিং, ঝুঁকির মোকাবিলা করা ও গোষ্ঠীবদ্ধ কাজে তাঁদের তালিম দেওয়া হয়। তার পর বিভিন্ন কাজে তাঁদের নিয়োগ করা হয়।
জানা গিয়েছে, নিজেদের কাজের পরিধির বাইরেও নানান ত্রাণ ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন প্রতিরোধী বন্ধুরা। বাঘজানে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড সংস্থার গ্যাসকূপে আগুন লাগার পরে গত ৯ জুন তাঁদেরই অনেকে স্থানীয়দের উদ্ধার ও আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজে নামেন।
অন্য দিকে, বানভাসি অসমের ২৮টি জেলার ৩৫ লাখের ওপর বাসিন্দাদের সুরক্ষা ও ত্রাণের কাজেও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অসমসাহসী স্বেচ্ছাসেবীরা।