রবিবার পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জেলায় শেষমেশ বন্দি হয়েছে বাঘিনী জিনত। টানা ২১ দিনের অক্লান্ত চেষ্টার পর তাকে বাগে আনতে পেরেছেন বন বিভাগের কর্মীরা। যা শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকেই, যখন জিনত ওডিশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প থেকে নিজের খেয়ালেই 'যেদিকে দু'চোখ যায়' বলে হাঁটা লাগিয়েছিল!
অবশেষে সেই বাঘিনী ধরা পড়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন বন দফতরের কর্মী ও আধিকারিক থেকে শুরু করে পুলিশবাহিনীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন ওডিশার প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) পি কে ঝা।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, জিনত একেবারে সুস্থ রয়েছে এবং যত শীঘ্র সম্ভব তাকে তার 'ঘরে', অর্থাৎ - সিমলিপালে ফিরিয়ে আনা হবে।
ঝা জানিয়েছেন, বাঁকুড়ার জঙ্গলে 'বাঘবন্দি' করতে যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার বন বিভাগের কর্মীরা। সেই দলে ওডিশার বন বিভাগ থেকে পাঠানো হয়েছিল ১৫ জন বনকর্মীর একটি দলকে।
ঝা বলেন, 'আমরা প্রাথমিকভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সিমলিপালের একেবারে কোর এলাকায় একটি সফ্ট এনক্লোজারের মধ্যে জিনতকে রাখব। যাতে সে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ওর গলায় রেডিয়ো কলার পরানো থাকবে। তার মাধ্যমে আমরা এনক্লোজারের মধ্যে বাঘিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখব।' বনাধিকারিকের আশা, এভাবে হয়তো জিনতের ঘরে মন টিকবে!
প্রসঙ্গত, ওডিশার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যাতে বাঘের প্রজাতি আরও উন্নত করা যায়, মূলত সেই লক্ষ্যেই গত ১৪ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তদোবা-অন্ধেরী ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকা থেকে জিনতকে সিমলিপাল নিয়ে আসা হয়েছিল। এর ১০ দিন পর তাকে জঙ্গলের একেবারে কোর এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
তারপর ৭ ও ৮ ডিসেম্বরের রাতে হঠাৎই বন বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকরা বুঝতে পারেন, জিনত তার 'বাড়িতে' নেই! সে হাঁটা লাগিয়েছে ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশে। তারপর সেখান থেকেই সে ঢুকে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে।
ঝা জানিয়েছেন, জিনতকে যেখানে পাকড়াও করা হয়েছে, সেখান থেকে তাকে সিমলিপালে ফিরিয়ে আনা হবে। এর আগের বার তাকে জঙ্গলের উত্তর অংশে ছাড়া হয়েছিল। এবার ভাবা হচ্ছে, তাকে ছাড়া হবে জঙ্গলের দক্ষিণ অংশে। জঙ্গলের এই দক্ষিণ অংশে আরও একটি বাঘিনী আছে। তার নাম যমুনা। তাকেও মহারাষ্ট্রের একই বনাঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
বন দফতরের হিসাব বলছে, সিমলিপাল ছাড়ার পর জিনত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এলাকা চষে বেরিয়েছে। ২১ দিন ধরে তিনটি রাজ্যে জারি থেকেছে তার সফর!
রবিবার চতুর্থবারের চেষ্টায় জিনতকে ঘুম পাড়ানো সম্ভব হয়। বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে তাকে অবশেষে কাবু করতে সক্ষম হন বনকর্মীরা। বন বিভাগের তরফে আগেই ঠিক করা হয়েছিল, প্রথমে কিছুদিন জিনতকে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় রাখা হবে। সেই মতোই বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
সেখানে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারপর জিনতকে ওডিশায় ফেরত পাঠানো হবে। বন বিভাগের আশা, এবার হয়তো ঘরে মন বসবে ৩ বছরের বাঘিনীর।