সেইসব ভারতীয় শিল্পপতি, যাঁরা নানা সময় নানাভাবে সমাজ কল্যাণের কাজ করেন, তাঁদের প্রসঙ্গ উঠলে রতন টাটা, আজিম প্রেমজি এবং মুকেশ আম্বানির মতো শিল্পপতির নাম উঠে আসে।
কিন্তু, তথ্য বলছে, শুধুমাত্র ভারতের নয়, বিশ্বের সবথেকে দরাজ দাতা বলে যে মানুষটি পরিচিত, তিনি কিন্তু উপরোক্ত শিল্পপতিদের মধ্যে একজনও নন। অথচ, তিনি একজন ভারতীয়। যিনি দানের নিরিখে বাকি সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন।
প্রাতঃস্মরণীয় সেই মানুষটি হলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটা। হিসাব বলছে, তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ৮.২৯ লক্ষেরও বেশি টাকা দান করেছিলেন। বর্তমান বাজারের নিরিখে যা ১০২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য!
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দাতাদের তালিকায় তাই আজও শীর্ষস্থানে রয়েছেন জামশেদজি টাটা। তালিকায় একত্রে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন মার্কিন ধনকুবের বিল গেটস এবং তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। আজ পর্যন্ত তাঁরা দান করেছেন ৭৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভারতীয় শিল্প জগতের জনক:
জামশেদজি টাটার জন্ম হয়েছিল ১৮৩৯ সালের ৩ মার্চ। কিন্তু, আজও তিনি ভারতীয় সমাজে সমান প্রাসঙ্গিক। সমাজ কল্যাণে তিনি যেসব কাজ করে গিয়েছেন, সেই ঐতিহ্য আজও অসংখ্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। শুধু তাই নয়, তাঁর অবদানের সুফল আজও বহু মানুষ ভোগ করছে।
বিশেষ করে ভারতের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জামশেদজি টাটার অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর উদ্যোগে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে, যা ভারতের মাটিতে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রভূত উন্নতি ঘটিয়েছে।
১৮৬৮ সালে টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করেন জানশেদজি। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত এই সংস্থা শুধুই যে আকারে এবং বহরে বেড়েছে, তাই নয়। আজকের দিনেও টাটা গোষ্ঠী সমগ্র ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম সম্মানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। টাটা গোষ্ঠীর অধীনে মোট ১০টি শিল্প ক্ষেত্রের আওতায় ৩০টিরও বেশি সংস্থা রয়েছে।
সমাজকল্য়াণের পারিবারিক ঐতিহ্য:
জামশেদজি টাটার জন্ম হয়েছিল একটি গুজরাতি পার্সি পরিবারে। পরবর্তীতে সেই পরিবারের মধ্যে তিনি সমাজ ও মানবকল্যাণের এমন এক বীজ বপন করেছিলেন, যা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। বস্তুত, টাটা পরিবার আজও সমাজের প্রতি অনেক দায়-দায়িত্ব পালন করে চলেছে। বিশেষ করে শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে আজও তাদের অবদান অভূতপূর্ব।
তথ্য ও হিসাব বলছে, ভারতের অন্য শিল্পপতিরা দান-ধ্যান করলেও তা আজ পর্যন্ত জামশেদজি টাটা বা তাঁর ঐতিহ্যকে পেরিয়ে যেতে পারেনি। যেমন- উইপ্রোর প্রতিষ্ঠাতা আজিম প্রেমজি এখনও পর্যন্ত আনুমানিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছেন। তবে, তা পরিমাণে জামশেদজি টাটার ধারেকাছেও যায় না।