ধর্ষিত নির্যাতিতার মৃত্যুতে পুলিশ তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত হাথরাস। উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে বুল গার্গি গ্রামে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে সরকার। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয় কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। রাহুল গান্ধীকে ঠেলে ফেলে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি হল শুক্রবার সকালে। এদিন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের বাধা পায় তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল। সেখানেই পুলিশের বিরুদ্ধে সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘ডেরেককে ঠেলে ফেলা দেওয়া হয়েছে। হয়তো তিনি আঘাতও পেয়েছেন। তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। একদন সাংসদে সঙ্গে এ কাজ কী করে করেত পারে পুলিশ!’ কাকলির প্রশ্ন, ‘আমরা কি নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানাতে পারি না?’ এইকসঙ্গে কাকলির অভিযোগ, ‘নির্যাতিতার বাবাকে ভয় দেখাচ্ছেন জেলাশাসক। তিনি তাঁকে হুমকি দিয়ে বলছেন— আজ গ্রামে সংবাদমাধ্যম রয়েছে, কাল কিন্তু চলে যাবে। পরে আমাদের সঙ্গেই থাকতে হবে।’
নির্যাতিতার বাড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের এই হাল দেখে আমি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। কোথাও কি এভাবে সাংসদদের সঙ্গে আচরণ করা হয়? কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মমতাবালা ঠাকুরকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা শুধু নির্যাতিতার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে চেয়েছিলেন। এখানকার উগ্র পুলিশ ভুল ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে।’ যদিও পুলিশের দাবি, ১৪৪ ধারা অমান্য করে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য তৃণমূল সাংসদদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। তিনি এদিন বলেন, ‘আমরা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেখানে আমাদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা কিছুটা জোর করে ঢুকতে চাইলে মহিলা পুলিশকর্মীরা আমাদের ব্লাউজ ধরে টানে এবং আমাদের সঙ্গে থাকা সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলের ওপর লাঠিচার্জও করে। তিনি পড়ে গেল পুরুষ পুলিশ আধিকারিকরা তাঁকে ধরে তোলে। পুরো ঘটনাটাই খুব লজ্জাজনক।’
সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘আমাদের বাধা দিলে আমরা উত্তরপ্রদেশের পুলিশের কাছে অনুরোধ জানাই যে অন্তত যাতে আমাদের দু’জন মহিলাকে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় প্রেমপ্রকাশ মীনা নামে এক পুলিশ আধিকারিক আমাকে ধাক্কা দেন। এটা পরিষ্কার যে এই উত্তরপ্রদেশের সরকার বা মোদী সরকার কোনও নারী সুরক্ষা দিতে পারবে না।’
এদিকে, এই পুরো ঘটনাকে নাটক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি এদিন কলকাতায় এক দলীয় কর্মসূচিতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাংলার গ্রামে গ্রামে মহিলাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। সেখানে কিছু বলছে না। কিন্তু অসমে গিয়ে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে নাটক করছে তৃণমূল। ভোট আসছে। বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ঠিকই জবাব দেবে।’