বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার এবং সেখানকার হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রভাব পড়েছে ভারতেও। কলকাতায় এই নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। এই আবহে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিশ দিলেন দমদমের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়। এই নিয়ে তিনি লোকসভার সচিবালয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিন্ম প্রভুর গ্রেফতারি ইস্যুতে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সৌগত রায়। এই নিয়ে নাকি সৌগত রায়ের প্রতি 'অসন্তুষ্ট' দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (আরও পড়ুন: 'ভাসুর মনে হয়…', বাংলদেশ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তোপ বামেদের,'কিউট' বললেন BJP নেতা)
আরও পড়ুন: জেলে ভরেই খান্ত হল না বাংলাদেশ, চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপের ঘোষণা
এর আগে সম্প্রতি অভিষেক নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে কেউ যেন ব্যক্তিগতভাবে কোনও বিষয় উত্থাপন না করেন। এদিকে বাংলাদেশ ইস্যুতে সংসদে দলের অবস্থান নিয়ে মমতা বলেন, 'সংসদে এই নিয়ে যা অবস্থান নেওয়ার তা দলতগ ভাবে নেওয়া হবে। ব্যক্তিগত ভাবে কারও অবস্থানে কিছু যায় আসে না।' সেইসঙ্গে তিনি জানান, লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডেপুটি সাগরিকা ঘোষ এবং চিফ হুইপ নাদিমুল হকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। এরই মাঝে সৌগত রায় নিজেই সংসদে বাংলাদেশের মতো সংবেদশনীল ইস্যুতে মুলতুবি প্রস্তাব আনায় দল নাকি 'ক্ষুব্ধ'।
আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা পর্যন্ত নেওয়া হতে পারে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতা বলেছিলেন, 'বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পাশে রয়েছি। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও অধিকার নেই।' (আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী কে? অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর বড় আপডেট দিলেন একনাথ শিন্ডে)
আরও পড়ুন: ঘুষকাণ্ডে তোপ বিরোধীদের, এরই মাঝে কেরলের বাম সরকার নয়া চুক্তি করল আদানির সঙ্গে
সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন বর্তমানে 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের' ব্যানারে আন্দোলন করছে। সেই জোটের মুখপাত্র করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা।
আরও পড়ুন: 'ভারতের কনস্যুলার ক্যাম্পগুলিকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে কানাডা'
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে অভিযোগ, চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে ওষুধ দিতে দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। ধৃত হিন্দু নেতাকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনার জেরে বাংলাদেশে সংখ্য়ালঘুদের মধ্য়ে শোরগোল পড়ে যায়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে। এদিকে চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমেছেন কয়েক হাজার হিন্দু। এরই মধ্যে প্রতিবাদী বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে ওঠে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ, মুখ খুলল সেই সেনা)
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। এদিকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬। সেদিন সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হন বলেও দাবি করা হয়। সেই খুনের ঘটনায় ৮ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।