সাম্প্রতিক সময়ে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে গিয়েছে ঠেকেছে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আলোচনার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। এদিকে মোদী সরকারকে কার্যত সমথন করেই সিপিএম একটি বিবৃতি জারি করেছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সাগরিকা ঘোষ কার্যত জাস্টিন ট্রুজোর সুরেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মোদী সরকারের দিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি একটি পোস্ট লিখেছেন, 'কেন ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকল? এই সবের মাঝে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ভূমিকা কী?' (আরও পড়ুন: আমরা চেয়েছিলাম কানাডার দাবিকে গুরুত্ব দিক ভারত, তবে তারা তো অন্য পথে হাঁটছে: USA)
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টায় ১০টি ভরতীয় উড়ানে বোমাতঙ্ক, একের পর এক বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
নিজের পোস্টে সাগরিকা লেখেন, 'এক বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান অভিযোগ করছে যে তাঁর দেশে মোদী সরকার বেআইনি অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। আর তা নিয়ে আমাদের নন-বায়োলজিকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না? কেন জাস্টিন ট্রুডো এই ধরনের অভিযোগ করছেন? কেন ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকল? এই সবের মাঝে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ভূমিকা কী? মেরুদন্ডহীন ভারতীয় মিডিয়া আনুগত্যের ট্রাম্পেট বাজাতে থাকবে। তবে অন্য কোও সরকার হলে এই সব বিস্ফোরক তথ্যের চাপে পড়ত।' (আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জড়িত আর্থিক তছরুপের সঙ্গে, আমাদের হাতে প্রমাণ আছে: ইডি)
এদিকে তৃণমূল সাংসদের এহেন মন্তব্যের মাঝে সামনে এসেছে সিপিএমের বিবৃতি। তাতে দের তরফ থেকে বলা হয়েছে, 'কানাডায় চলতে থাকা ভারত বিরোধী খলিস্তানপন্থী কার্যকলাপ আমাদের দেশের জন্যে খুবই উদ্বেগের। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে সরাসরি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করা ভারতীয় সরকারের কর্তব্য। কানাডা সরকারের নানান অভিযোগ ভারত সরকার খারিজ করেছে। আমরা আশা করি বিরোধীদের এই বিষয় ভারত সরকার জানাবে। পাশাপাশি লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের ভূমিকার যে অভিযোগ উঠেথে, সেই বিষয়ে সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে।'
প্রসঙ্গত, ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে। নিজ্জরের হত্যার ঘটনায় ভারতের যোগ থাকতে পারে বলে ২০২৩ সালে কানাডার সংসদে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন ট্রুডো। তবে সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিল ভারত। আর সেইসঙ্গে গত এক বছরে বারবার বলে এসেছে যে প্রমাণ দেওয়া হোক নয়াদিল্লিকে। সেই প্রমাণ অবশ্য দিতে পারেনি ট্রুডো সরকার। এদিকে সম্প্রতি কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সঞ্জয় বর্মা-সহ কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিবিদকে একটি মামলার তদন্তে ‘পারসন অফ ইন্টারেস্ট’ করা হয়। এমনকী তাঁদের জেরা করতে চাওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে একাধিক রিপোর্টে। সূত্রের খবর, খলিস্তানি জঙ্গি নিজ্জরের মামলায় সঞ্জয় ভার্মাদের কাছে কোনও তথ্য থাকতে পারে বলে দাবি করেছিল কানাডা। আর এরপরই কানাডা সরকারের সেই পদক্ষেপে তুমুল ক্ষোভপ্রকাশ করে নয়াদিল্লি। প্রাথমিকভাবে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। তলব করা হয় ভারতে কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস উইলারকে।
এরপর কানাডা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার-সহ বেশ কয়েকজন কূটনীতিবিদকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা করা হয়। আর তারপর ভারতে কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার-সহ ছয় কূটনীতিবিদকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই আবহে এবার মুখ খুললেন ট্রুডো। এই সংঘাতের আবহে কানাডা আবার দাবি করেছে, খলিস্তানিপন্থীদের ভারতীয় এজেন্টরা হেনস্থা করছে। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, সেই কাজের জন্য সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে নাকি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গেও কাজ করেছে ভারতীয় এজেন্টরা। যদিও ভারত প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছে, ট্রুডো সরকার নিজের খলিস্তানি ভোটব্য়াঙ্ককে পকেটে রাখতে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আসছে। এরই মাঝে আবার আমেরিকার তরফ থেকে ভারতকে 'পরামর্শ' দেওয়া হল কানাডাকে তদন্তে সাহায্য করার।