তিস্তা নদী বা ফরাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি (যথাক্রমে - তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি এবং গঙ্গা জল চুক্তি) ভারত সরকার যদি নবীকরণ করতে চায়, কিংবা এই দু'টি ইস্যুতে যদি নতুন করে কোনও বোঝাপড়া করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার, তাহলে অবশ্যই সেটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানিয়ে, তাদের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে করতে হবে। রাজ্য সরকারকে বাদ রেখে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ, ২০২৫) সংসদে এই দাবি উত্থাপিত করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জল চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। কিন্তু, পরবর্তীতে দেখা যায় - এর ফলে এপার বাংলার মানুষকে অনেক খেসারত দিতে হচ্ছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশের দাবি, বেশ কিছু ভুল ত্রুটির জন্য গত প্রায় তিন দশকে গঙ্গা ও পদ্মায় ভাঙনের শিকার হয়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ হল, এই চুক্তির সময় নিয়মিত নদীবক্ষ থেকে পলি তোলার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবে ড্রেজিংয়ের সেই কাজ করা হয় না। এর ফলে নদীর প্রবাহ প্রভাবিত হয়েছে। উপরন্তু, এই চুক্তির অধীনে রাজ্যের যে টাকাও পাওয়ার কথা, সেটাও দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, ফরাক্কা চুক্তির কারণে এপার বাংলা বহু মানুষ তাদের সর্বস্ব খুইয়েছে। সুন্দরবনের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকী, কলকাতা বন্দরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অন্যদিকে, তিস্তা নদী উত্তরবঙ্গের লাইফলাইন। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার বাসিন্দাদের পানীয় জলের অন্যতম প্রধান উৎস হল এই নদী। তাছাড়া, ওই এলাকাগুলিতে চাষের জন্য যে জল ব্যবহার করা হয়, তাও তিস্তা থেকেই সংগ্রহ করা হয়। এখন যদি তিস্তার জল অধিক পরিমাণে বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গের মানুষকে তার কুফল ভোগ করতে হবে।
এছাড়াও, গত কয়েক দশকে গঙ্গা থেকে শুরু করে তিস্তা - সমস্ত নদীরই গতিপ্রকৃতি অনেক বদলে গিয়েছে। তাই নতুন করে যদি এই দু'টি ইস্যুতে কোনও চুক্তি করা হয় বা পুরোনো চুক্তির নবীকরণ করা হয়, তাহলে বাংলার মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেই তেমনটা করতে হবে। আর তার জন্য এই প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারেকও পক্ষ হিসাবে রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, অতীতে বহুবার মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মুখেও একথা শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। আবার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদল ভারত সফরে এসে ফরাক্কা বাঁধ পরিদর্শন করে গিয়েছে। কিন্তু, তারা তিস্তা চুক্তি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। এদিকে, আবার ফরাক্কা চুক্তি নবীকরণ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে।
এই প্রেক্ষাপটেই এদিন তিস্তা ও ফরাক্কা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য সরকারের পক্ষ উপস্থাপিত করলেন তৃণমূল সাংসদ।