তৃণমূল কংগ্রেসের পাখির চোখ এখন ত্রিপুরা। তাই সেখানে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সংগঠন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শীর্ষ নেতাদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা প্রতি মাসে এখানে প্রচার করতে আসবেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মনের সঙ্গে বৈঠক করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। প্রদ্যোৎ শুধুমাত্র মহারাজা নন, তিনি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অন্যতম প্রধান মুখও বটে। তাই এই সাক্ষাৎ ঘিরে বেড়েছে জল্পনা।
কিন্তু কারা আছেন এই টিমে? জানা গিয়েছে, ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক, কাকলি ঘোষদস্তিদার, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সমীর চক্রবর্তী এবং কুণাল ঘোষ। তাই কুণাল ঘোষের সফর দলের নির্দেশেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এবার রস্টার তৈরি করে সেখানে প্রতি মাসে শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হবেন। সংগঠন তাতে চাঙ্গা হবে। আর প্রচার চালানো হবে নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই। তাই অভিষেকের সফরের পরই বুধবার আগরতলা যান কুণাল ঘোষ। সেখানে দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। সিপিআইএম এবং কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। আজ ত্রিপুরার রাজ পরিবারের ১৮৬তম বংশধর প্রদ্যোতের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। যদিও কুণালের দাবি, ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ।’
আগামী ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। উত্তর পূর্বের এই রাজ্যের ৬০ আসনের মধ্যে ২০টি উপজাতি প্রভাবিত। তাই ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সঙ্গে কুণালের বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে মুখ খুলেছেন ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য। প্রদ্যোৎ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি হলেও এখন জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অন্যতম প্রধান মুখ।
এখানে পিকে’র টিম আইপ্যাক–কে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা ইন্ডিজেনিয়াস প্রগ্রেসিভ রিজিওনাল অ্যালায়েন্স বা টিপ্রা’র প্রধান প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মন। সেই তিনি অভিষেককে ত্রিপুরায় স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস উপজাতি মানুষদের স্বার্থরক্ষায় সহমত হলে জোট হতেই পারে।’ এখানে ২১ জুলাই শহিদ সমাবেশ পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে এটাই প্রথম। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস এখানে নতুন কমিটি ঘোষণা করবে বলে খবর। প্রথমে রাজ্য কমিটি, তারপর জেলা কমিটি এবং ব্লক কমিটি করে সভাপতি নিয়োগ করা হবে। আর ডিসম্বর মাসের মধ্যে বুথ কমিটি তৈরি করা হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস আগামী নির্বাচনে ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রদ্যোতের সঙ্গে কুণালের সাক্ষাৎ ঘিরে ত্রিপুরায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এখানে জোট করে জনজাতির ভোট নিজের ঝুলিতে টানতে চাইবে তৃণমূল কংগ্রেস। বাঙালি আবেগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির ভোটব্যাংকে থাবার বসাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই দুই অংক মিলে গেলেই ত্রিপুরায় সরকার গড়তে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।