জন্ম হার কমে গিয়েছে মারাত্মক! আর, তাই সরকারি ক্ষেত্রে কর্মদিবসে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিল জাপান! তাদের আশা, নাগরিকরা (বিশেষ করে চাকরিজীবী মহিলারা) অফিসে না এসে যদি বাড়িতে বেশি সময় ধরে থাকেন, তাহলেই ফের বাড়বে জন্ম হার!
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র টোকিও শহরেই নয়া ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থির হয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস, অর্থাৎ - আগামী অর্থবর্ষের একেবারে শুরু থেকেই টোকিওর সমস্ত সরকারি দফতরে কাজ হবে সপ্তাহে চারদিন। বাকি তিনদিন সরকারি কর্মী ও আধিকারিকরা বাড়িতেই থাকবেন।
গত সপ্তাহে টোকিও মেট্রোপলিটন সরকারের তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে কর্মরতা মায়েদেরও বিশেষ সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ - আগামী অর্থবর্ষ থেকেই টোকিওয় কর্মরত সরকারি কর্মী ও আধিকারিকরা তিনদিন করে সাপ্তাহিক ছুটি পাবেন।
এর পাশাপাশি, যে কর্মী ও আধিকারিকদের সন্তান স্কুলে পড়াশোনা করে, তাঁরা যদি চান, নির্ধারিত সময়ের আগেই রোজ কাজ থেকে বাড়ি ফিরতে পারেন। তেমনই ব্যবস্থা চালু করেছে জাপানের সরকার। তবে, আগেভাগে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার অনুমতি পাওয়ার জন্য এই বাবা-মায়েদের বেতনও কিছুটা কম নিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে টোকিওর গভর্নর উরিকো কোইকে সিএনএন-কে জানিয়েছেন, 'আমরা কাজের পরিবেশকে আরও নমনীয় করে তুলতে চাই। যাতে কাউকে সন্তানের জন্ম দেওয়া বা বাচ্চা মানুষ করার মতো কাজগুলির জন্য নিজেদের কেরিয়ারের সঙ্গে আপস করতে না হয়।'
প্রশাসনের বক্তব্য হল, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স ঠিকঠাক করাই তাদের লক্ষ্য। যাতে আমজনতা অনায়াসেই তাঁদের পরিবার পরিকল্পনা করতে পারে। উরিকো এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, 'সময় এসে গিয়েছে। এবার টোকিওকে উদ্যোগী হতেই হবে। যাতে জীবন এবং জীবনধারণ সুরক্ষিত রাখা যায়।'
তথ্য বলছে, সম্প্রতি জাপানের জন্ম হার মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। হিসাব বলছে, জনসংখ্যার সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য জাপানের জন্মহার হওয়া উচিত - ২.১ শতাংশ। কিন্তু, ২০২৩ সালে তা ছিল, প্রায় অর্ধেক - ১.২ শতাংশ। যা এখনও পর্যন্ত সর্বনিম্ন! জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, গত বছর সেদেশে মাত্র ৭,২৭,২৭৭টি শিশুর জন্ম হয়েছে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির জন্য বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছেন। তা হল - জাপানের কঠোর কর্ম সংস্কৃতি, জীবনধারণের উচ্চ খরচ এবং কর্মরত বাবা-মায়েদের প্রতি তেমন কোনও সরকারি সহযোগিতা না থাকা।
শুধু তাই নয়। জাপানে দীর্ঘ সময় ধরে টানা কাজ করার ফলে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। যার জেরেই সেদেশের তরু-তরুণীরা পরিবার তৈরি করতে বা সন্তান ধারণ করতে ক্রমশ উৎসাহ হারাচ্ছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।