সম্প্রতি লোকসভায় নয়া আয়কর বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রের তরফ থেকে দাবি করা হয়, এখনকার আয়কর আইনের ভাষা আরও সহজ করার জন্যেই নয়া বিল পেশ করা হয়েছে। যেমন, নয়া বিলে 'অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার', 'প্রিভিয়াস ইয়ার'-র মতো টেকনিকাল শব্দের পরিবর্তে সহজ 'ট্যাক্স ইয়ার' ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিল নিয়ে অবশ্য সাধারণ করদাতাদের মনে একাধিক প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। সেই সব প্রশ্নেরই জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হল নীচে... (আরও পড়ুন: ডিএ বৃদ্ধির পরে সরকারি কর্মীরা পেতে পারেন আরও এক বড় খবর, দাবি খোদ ব্যয় সচিবের)
আরও পড়ুন: নিয়ম লঙ্ঘনের জের, এবার দুই ব্যাঙ্ককে ৬৮ লাখ টাকা জরিমানা করল RBI
আরও পড়ুন: ১৮ বছর পর ফের লাভের মুখ দেখল BSNL, তৃতীয় কোয়ার্টারে মুনাফার অঙ্কটা...
- আয়কর আইনে কেন সংশোধন প্রয়োজন পড়েছে?
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান আয়কর কাঠামোকে সরল ভাবে করদাাদের কাছে তুলে ধরতেই সংশোধনের প্রয়োজন। উল্লেখ্য, আয়কর আইন, ১৯৬১ পাশ হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তারপর থেকে এটি ৬৫ বার সংশোধন করা হয়েছিল। সরকারের কর নীতিতে পরিবর্তনের ফলেই এতবার সংশোধন করতে হয়েছিল এই আইনকে। এতগুলি সংশোধনীর ফলে এই আইনের ভাষা জটিল হয়ে পড়েছিল। এই আবহে ২০০৯ এবং ২০১৯ সালে আয়কর আইনকে সরল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সব সরলীকরণের প্রস্তা নয়া বিলে যোগ করা হয়েছে।
- নয়া আয়কর বিল নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য কী?
২০২৪ সালের জুলাইতে বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আয়কর আইন, ১৯৬১-কে পর্যালোচনা করে সেটিকে আরও সহজ, সরল করা হবে। সেই নীতি অনুসরণ করেই নয়া বিল এনেছে সরকার।
- কীভাবে নয়া আয়কর বিলকে সরল করার চেষ্টা করা হয়েছে?
নয়া আয়কর বিলে পুরনো আইনের অপ্রয়োজনীয় বিধানগুলিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই আয়কর বিলের খসড়া অনেক সরল। এর ফলে বিধানগুলি বুঝতে সুবিধা হবে। আগের ১৮টি টেবিলের জায়গায় বিস্তারিত ভাবে ৫৭টি টেবিল যোগ করা হয়েছে এই বিলে। এই বিলে বিধানগুলিকে বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করতে উপধারার ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগের আয়কর আইন, ১৯৬১-তে অনের ক্রস রেফারেন্স ছিল। তবে এই নয়া আয়কর বিলে রেফারেন্স অনেক সরল করা হয়েছে। নয়া বিলে 'অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার', 'প্রিভিয়াস ইয়ার'-র মতো টেকনিকাল শব্দের পরিবর্তে সহজ 'ট্যাক্স ইয়ার' ব্যবহার করা হচ্ছে।
- ১৯৬১ সালের আইনের তুলনায় কতটা বড় এই নয়া আয়কর বিল?
১৯৬১ সালের আয়কর আইনে ২৯৮টি ধারা, ৫২টি অধ্যায় এবং ১৪টি তফসিল আছে। পৃষ্ঠার সংখ্যা হল ১,৬৪৭। সেখানে নয়া আয়কর বিলে ৫৩৬টি ধারা, ২৩টি অধ্যায় এবং ১৬টি তফসিল থাকলেও মাত্র ৬২২টি পৃষ্ঠা আছে।
- নয়া আয়কর বিলে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ধারা আছে?
নয়া আয়কর বিলের ৬৭ ধারা থেকে ৯১ ধারায় ডিজিটাল সম্পত্তির জন্য স্পষ্ট নিয়ম আছে। আর তার ফলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ডিজিটাল সম্পত্তি নির্দিষ্ট কর কাঠামোর আওতায় থাকবে।
- নয়া আয়কর বিলে আয়কর রিটার্ন নিয়ে কী প্রস্তাব আছে?
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা দু'বছর থেকে বাড়িয়ে চার বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নয়া আয়কর বিলে। আর তার ফলে আয়কর রিটার্নে কোনও ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য করদাতারা আরও বেশি সময় পাবেন।
- নতুন আয়কর বিলে ভাষা কীভাবে সরল করা হয়েছে?
আয়কর আইন, ১৯৬১-তে 'আইনি ভাষা' প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে নয়া বিল ড্রাফটে আইনি ভাষার বদলে সহজ সরল ভাষায় বিধানগুলি লেখা হয়েছে।
- আগের আয়কর আইনের বিধান এবং তার ব্যাখ্যাগুলির কী হয়েছে নয়া বিলে?
প্রভিসো (১২০০টির বেশি) এবং ব্যাখ্যা (৯০০টির বেশি) সরিয়ে ফেলা হয়েছে নয়া বিলে। এর বদলে সরল আকারে বিষয়বস্তুগুলিকে ধারা এবং উপধারা হিসাবে ভাগ করা হয়েছে। যেখানেই সম্ভব, পদ্ধতিগত দিক এবং নির্দিষ্ট বিবরণ নিয়মের মাধ্যমে প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই সঙ্গে নতুন বিল যাতে করদাতারা আরও স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারেন, তার জন্য সূত্র, টেবিল এবং কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে।