ঋতমা কৌল
গুজরাতের ড্রেনের নমুনায় মিলল করোনাভাইরাসের (Sars-Cov-2) অস্তিত্ব। তারপরই বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। একইসঙ্গে দূষিত ড্রেনের জল সংক্রমণ ছড়াতে পারে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, 'অবশ্যই পরের কাজ হচ্ছে, এর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি আছে কিনা, তা নির্ণয় করা। তবে সেটা শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে, কারণ আরও অনেক কিছু বিষয় পড়ে আছে। যেগুলিতে দ্রুত নজর দেওয়া প্রয়োজন।'
এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র গুজরাতের ড্রেনের নমুনায় করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। বাকি রাজ্যেরও ক্ষেত্রে সেই পরীক্ষা করা হবে। ওই আধিকারিক বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে, অন্য রাজ্যেও একই হয় কিনা, তা আমাদের দেখতে হবে। কিছু সময়ের জন্য আমরা ড্রেনের নমুনা পরীক্ষা চালিয়ে যাব।’
ড্রেনের নমুনা পরীক্ষা অবশ্য ভারতে নতুন নয়, বরং পোলিও ভাইরাসের উপস্থিতির জন্য নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। সেইমতো করোনার নজরদারি আরও জোরদার করতে ড্রেনের নমুনায় করোনাভাইরাস আছে কিনা, তা দেখার জন্য ড্রেনের নমুনা পরীক্ষা শুরু করে ন্যাশনাাল সেন্টার অফ ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)।
ওই আধিকারিক বলেন, ‘পোলিও নজরদারির জন্য আমাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) স্বীকৃত ল্যাব আছে। যা পোলিও ভাইরাসের উপস্থিতির জন্য নিয়মিত ড্রেনের নমুনা পরীক্ষা করে। একই ল্যাব, নজরদারি প্রক্রিয়া এবং একই বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখছেন, ড্রেনের নমুনায় করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কিনা।’
গত এপ্রিল থেকেই ড্রেনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছে এনসিডিসি। যে সংস্থা দেশের রোগজনিত যাবতীয় নজরদারির কাজ চালায়। গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লির মতো যে রাজ্যগুলিতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি, সেখানে বেশি নজর দেওয়া হয়।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক এনসিডিসি আধিকারিক বলেন, ‘রোগটা (কোভিড-১৯) যে মল-মুখ সংক্রমণের পথ মেনে চলে না, তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কীভাবে রোগ ছড়ায় তা আরও ভালো করে বোঝার জন্য নজরদারির মাত্রা বৃদ্ধিতে কোনও ক্ষতি নেই। বিশেষত ইতিমধ্যে যখন আমাদের কাছে একটি নজরদারি প্রক্রিয়া এবং অত্যাধুনিক ল্যাব আছে।’
তবে ড্রেনের নমুনায় করোনার অস্তিত্ব পাওয়ায় অবাক নন এনসিডিসি আধিকারিক। তিনি জানান, করোনার প্রভাব যখন সবথেকে বেশি থাকে, তখন মলে করোনার অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন গবেষণায়। তবে নমুনা পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হল, নিকাশি ব্যবস্থায় কী এমনভাবে সেই ভাইরাসের প্রভাব পড়ছে, যার ফলে সংক্রমণ হতে পারে।
করোনার দাপটের গোড়ার দিকে ‘এমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ জার্নাল’-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, চিনে করোনায় মৃত এক রোগীর মূল থেকে Sars-CoV-2 আলাদা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্ত পরীক্ষার সঙ্গে ড্রেনের নমুনা পরীক্ষাও নজরদারির ভালো উপায় হতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে ট্রানসলেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটয়ের বিজ্ঞানী গগনদীপ ক্যাঙ্গ বলেন, ‘হংকংয়ে নিকাশির মাধ্যমে SARS ছড়িয়ে পড়া এবং এখন মলে SARS CoV-2 নিয়ে নয়া তথ্য। সেটা কি কোনও একটি রোগীর ক্ষেত্রে নাকি এটা সংক্রমণের একটি বড় মাধ্যম?’ পাশাপাশি আরও বেশি ড্রেনের নমুনা পরীক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।