বাড়ি থেকেই স্ত্রীকে সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করলেন স্বামী। কষ্ট না সইতে পেরে মৃত্যু মা ও নবজাতকের। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে কেরালার তিরুবনন্তপুরমে, সম্পূর্ণটাই স্বামীর একগুঁয়েমির কারণে ঘটেছে। জানা গিয়েছে, স্বামী নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে আকুপাংচারের সাহায্যে বাড়িতেই ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনায় চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মহিলা ও নবজাতক দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে যে মহিলার স্বামী তাঁকে স্বাভাবিক নিয়মে প্রসব করাতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি গর্ভবতী স্ত্রীকে কোনও ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যাননি।
কারাক্কামন্ডপমে আকুপাংচার চিকিৎসা ব্যবহার করে মহিলাকে প্রসবের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ৩৬ বছর বয়সী শেমিরা বিবি ও নবজাতক দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অভিযুক্ত স্বামীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী নিয়াজের বিরুদ্ধে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের মতে, মৃত মহিলা শেমিরা বিবির এটি চতুর্থ সন্তান প্রসব ছিল। গর্ভাবস্থার শেষ নয় মাসে তিনি কখনও কোনও ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেননি। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই দম্পতি একজন মেডিকেল ডাক্তারের পরিবর্তে একজন আকুপাংচারিস্টের সাহায্য নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি মহিলার ভাড়া বাড়িতে তাঁকে দেখতে আসতেন।
এরপর মঙ্গলবার ওই গভবর্তী মহিলার শরীরে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। অবশেষে সন্ধ্যায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে ও শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। মহিলা ও নবজাতকের মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই স্থানীয় কাউন্সিলর, আশা কর্মী ও প্রতিবেশীরা নিয়াজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। ওয়ার্ড কাউন্সিলর দীপিকা বলেছেন, ওই মহিলার স্বামী আশা কর্মীদের বাড়িতে ঢুকতে বা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দেননি। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, 'ওই পরিবার আমাদের নিজেদের বাড়িতে প্রবেশ করতে দিত না। এমনকি অন্য কোনও বিবরণ জানাতেও প্রস্তুত ছিল না। একদিন, আমরা কোনওভাবে বাড়িতে ঢুকতে পেরেছিলাম এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারপর তখনই আমরা জানতে পারি যে এই নিয়ে চতুর্থবার মা হচ্ছেন মহিলা।'
সে সময় শেমিরার কাছ থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি এর আগে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন সি-সেকশনের মাধ্যমে। এবং শেষ প্রসব হয়েছিল মাত্র এক বছর আগে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই কাউন্সিলর আরও জানিয়েছেন যে, 'অতএব, তাঁর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবের কোনও সম্ভাবনা ছিল না, তবে তাঁর স্বামী স্বাভাবিক প্রসবের বিষয়ে অনড় ছিলেন, ইউটিউব দেখেছিলেন স্বাভাবিক প্রসবের জন্য। তাই মহিলাও ডাক্তারের কাছে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে শেমিরার স্বামীর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং আরও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে।