শহর কলকাতায় আদৌ ট্রাম ফেরানো হবে কিনা, সেই বিষয়টি এখনও আদালতের বিচারাধীন, তা সত্ত্বেও নানা অছিলায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চিরতরে কলকাতার ট্রামকে ইতিহাসের পাতায় ঢুকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে! রবিবার কার্যত এই অভিযোগ তুলেই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল হল ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ওই দিন টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের পাশাপাশি সেই আয়োজনে যোগ দেন অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র পরিচালক অশোক বিশ্বনাথন প্রমুখ।
এদিনের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বেশ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসন যে ট্রাম পরিষেবা ফেরাতে বা তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটুও আগ্রহী নয়, এই ঘটনাগুলি থেকেই তা প্রমাণিত।
কী সেইসব ঘটনা?
অভিযোগ, কলকাতা পুরনিগমের জলের পাইপ সারানোর একটি কাজ শুরু হয়েছিল গতবছর। যার জন্য টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে মাত্র ২০ দিনের জন্য ট্রাম চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু, সেই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পাঁচমাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। আজও বন্ধ রাখা সেই ট্রাম রুট চালু করা হয়নি।
অথচ, এই রুটেই রয়েছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বালিগঞ্জ রেল স্টেশনটি। এছাড়াও রয়েছে - গড়িয়াহাট মোড়, দেশপ্রিয় পার্ক, লেক মল, রাসবিহারী মোড়, বজবজ শাখার রবীন্দ্র সরোবর লাগোয়া টালিগঞ্জ রেল স্টেশন এবং মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন। তাই অনেকেই মনে করেন, এই রুটে যদি ঠিকঠাক পরিষেবা দেওয়া যায়, তাহলে সকলেরই লাভ। কিন্তু, যুৎসই কোনও কারণ না দেখেই এই রুটে ট্রাম চলাচল কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!
ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের আরও বক্তব্য, ট্রামের মতো একটি পরিবেশবান্ধব এবং কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা যান যাতে অবিলম্বে রাস্তায় ফেরানো যায়, সেই দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু হয়েছে।
সেই মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুরনিগম, কলকাতা পুলিশ, রাজ্য পরিবহণ দফতর এবং পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, শহরের রাস্তায় ট্রাম ফেরানোর বিকল্প ও বাস্তবসম্মত সম্ভাবনাগুলি নির্ধারণ করা এবং তার রূপায়ন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে প্রস্তাব পেশ করা। কিন্তু অভিযোগ হল, এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ, আজও ওই কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি!
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, এমন উদাহরণ আরও আছে। যেমন - প্রায় পাঁচবছর আগে ঘূর্ণিঝড় আমফানে খিদিরপুর-এসপ্লানেড রুটে ট্রামের তার ছিঁড়ে গিয়েছিল। সেই ছেঁড়া তার আজও জোড়া লাগেনি। উপরন্তু, ওই এলাকায় রাস্তায় এমনভাবে পিচ করা হয়েছে, যাতে ট্রামলাইন পুরোপুরি ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবে ধাপে ধাপে এবং ধীর ধীরে ট্রাম পরিষেবা পাকাপাকিভাবে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দিনে হয়তো টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটেরও একই পরিণতি ঘটবে।
অন্যদিকে, ইতিমধ্য়েই ট্রাম ডিপোগুলির জমি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। যদিও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দাবি, প্রয়োজনীয় অনুমতি পেলে তাদের অন্তত কোথাওই পরিষেবা পুনরায় চালু করতে কোনও আপত্তি নেই।