মকর সংক্রান্তির দিনে তিল ও গুড় খাওয়ার রীতি প্রচলিত থাকায়, এর বিক্রি বৃদ্ধিই স্বাভাবিক। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের আবহে গুড় ও চিনি দিয়ে তৈরি তিলকূট বা তিলের অন্যান্য নানা খাদ্যবস্তুর ক্ষেত্রেও এবার উপাদানগত পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশে এবার তিলকূট প্রস্তুতকারীরা এতে গুড়, চিনি ও তিলের পাশাপাশি নানা আয়ুর্বেদিক উপাদানের সংযোজন ঘটিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। বাজারে দেখা মিলছে আয়ুর্বেদিক তিলকূটের।
পাটনার মিঠাপুরের চুম্মি ভাই তিলকূটওয়ালার তরফে ঘনশ্যাম সাহ বলেছেন, ‘তিল প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর গরম রাখে, যা সাধারণত শীতকালে খাওয়া হয়ে থাকে। চিনি ও গুড় এর মিষ্টি স্বাদের জন্য দায়ী। কিন্তু করোনার মহামারীর যুগে, আমরা তিলকূটে মৌরি, মুলেঠি, অশ্বগন্ধা, লবঙ্গ ও দারুচিনিও মিশিয়েছি। সাধারণ তিলকূট যেখানে ২০০ টাকা প্রতি কিলো দরে বিক্রি হয়, সেখানে আয়ুর্বেদিক তিলকূটের দাম পড়বে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি।‘
তিনি আরও জানিয়েছেন, মূলেঠি ও অশ্বগন্ধা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও লবঙ্গ শরীর গরম রাখে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের সংযোজনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই এই নতুন ধরণের তিলকূটের বিষয়ে অনভিজ্ঞ। কারণ প্রথমবার চিরাচরিত স্বাদে এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই ভেষজ উপাদানগুলিকে সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করাই এই ব্যবসার আসল খেলা।
অন্য দিকে দিঘার এক তিলকূট প্রস্তুতকারী দীপক শর্মা জানান, তাঁরা তিলকূটে মৌরি মিশিয়ে এর স্বাদ বৃদ্ধিতেই সচেষ্ট। কারণ যথাযথ জ্ঞান ছাড়া নতুন কোনও সামগ্রীর ব্যবহারের ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
উল্লেখ্য, মকর সংক্রান্তির প্রাক্কালে যে সমস্ত তিলকূট বিক্রি হয়, তা ফুড সেফটি ও স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার আওতাধীন নয়। দীঘারই আর এক ব্যবসায়ী কানেশ্বর সাউয়ের মতে, এ ধরণের স্বল্পকালীন ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নেওয়া সম্ভব হবে না।
পাটনার সরকারি আয়ুর্বেদিক কলেজের প্রিন্সিপাল দীনেশ্বর প্রসাদ জানিয়েছেন, এই প্রথম বার কয়েকজন তিলকূট প্রস্তুতকারকরা এতে আয়ুর্বেদিক উপাদানের সংযোজন ঘটিয়েছেন। তবে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘সকলেই সঠিক পরিমাণে তার ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। উৎপাদনকারীরা যদি আমাদের সাহায্যে এমনটি করতেন, তা হলে আমরা এই উপাদানগুলির সঠিক অনুপাত নির্ধারণ করতে পারতাম। তিল ও লবঙ্গ প্রাকৃতিক উপায় শরীরকে উষ্ণ রাখে। আবার মূলেঠি ও অশ্বগন্ধা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মধুমেহ রোগী ছাড়া, অন্যরা এই তিলকূট খেলে সুফল পেতে পারেন। স্বাস্থ্য দফতর সম্মতি জানালে আমরা প্রস্তুতকারীদের জন্য একটি কাউন্সেলিং সেশনের আয়োজন করতে পারি, যেখানে তাঁরা সঠিক পরিমাণে এই উপাদানের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন ও তাঁদের একটি গাইডলাইনের আওতায় আনা যেতে পারে।‘
তিনি জানিয়েছেন, তিলকূট FSSAI অ্যাক্টের আওতাধীন নয়। তবে এই বিষয় এখনও অস্পষ্টতা থেকে গিয়েছে। অনেকেই একে FSSAI অ্যাক্টের অধীনে আনার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানতে পেরেছেন তিনি।