অল্পবিস্তর পথ নয়। রীতিমত ৩২১৩ কিলোমিটার অ্যাম্বুলেন্সে করে এসে অবশেষে বাড়ি ফিরলেন এক বাঙালি দম্পতি। চেন্নাই থেকে ত্রিপুরার আগরতলা অবধি অ্যাম্বুলেন্সে আসেন তারা লকডাউনকে অতিক্রম করে। চিকিত্সার জন্য মার্চের ২০ তারিখ ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন এই প্রৌঢ় দম্পতি। মোদী লকডাউন ঘোষণা করার পর সেখানেই আটকে যান তাঁরা।
অবশেষে ঠিক করেন যে অ্যাম্বুলেন্সে করেই ফিরবেন বাড়ি। ১৫ এপ্রিল চেন্নাই থেকে বেরিয়ে ১৯ এপ্রিল তারা আগরতলার নিকট উদয়পুরে এসে পৌঁছান। ত্রিপুরার ক্রীড়া দফতরের প্রাক্তন আমলা চঞ্চল মজুমদার জানান যে তাঁর স্ত্রীর চেকআপের জন্য চেন্নাইয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। তারপর লকডাউনে আটকে পড়েন। দ্বিতীয় বার যখন ফের বাড়ানো হয় সময়সীমা, তখন তাঁরা ঠিক করেন যে কোনও উপায় বাড়ি ফিরবেন। মে মাসের আট তারিখ তাঁদের মেয়ের বিয়ে ছিল। সেটাও পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে হাসপাতালে অতদিন থাকার খরচ ও ঝক্কি, দুটোই সহ্য করতে হচ্ছিল।
এই কারণে হাসপাতাল থেকে একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেই বাড়ির দিকে রওনা দেন তাঁরা। মোট ১.৪০ লক্ষ টাকা লেগেছে বাড়ি ফিরতে। তাঁরা বাড়ি ফেরা মাত্রই অবশ্য তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে ত্রিপুরা প্রশাসন বলে জানিয়েছেন গোমতীর জেলাশাসক টিকে দেবনাথ।
দেবনাথবাবু জানান যে নিজেদের মেয়ের সঙ্গেও দেখা করেননি এই দম্পতি। সোজা গিয়েছেন আইসোলেশনে। তাঁরা সুস্থ আছেন বলে জানান জেলাশাসক। চঞ্চলবাবু প্রাক্রন আমলা, তাঁর স্ত্রী অসীমা মজুমদার অ্যাখলেটিকস প্রশিক্ষক। গত সেপ্টেম্বরে চেন্নাইয়ে ব্রেন টিউমার সার্জারি হয়ে অসীমাদেবীর।
প্রাক্তন আমলা জানিয়েছেন চেন্নাইতে ত্রিপুরার অনেকে আটকা পড়ে আছেন, যারা খুব কষ্টে আছেন। কীভাবে লকডাউন এড়িয়ে এতটা পথ এলেন তাঁরা? জানা গিয়েছে হাসপাতালের ডকুমেন্ট তারা যাবতীয় এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্টে দেখিয়েছেন, ফলে যেতে অসুবিধা হয় নি।
কিন্তু এতটা পথ জার্নি করতে খুব ধকল গিয়েছে এই বয়স্ক দম্পতির। পথে স্থানীয় দোকানে যা খাবার পেয়েছেন, তাই দিয়েই কাজ চালিয়েছেন তাঁরা। লকডাউনের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াতের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। এমনকী এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতেও সমস্যা নেই। তারই সুযোগ নিয়ে প্রায় ভারতদর্শন করে ফেললেন এই দম্পতি।