রাজার প্রাসাদ নাকি আদতে আর রাজার নেই! খানিকটা এমনই দাবি করছেন ত্রিপুরার পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, এককালে যে পুষ্পবন্ত বা কুঞ্জবন প্রাসাদ ছিল ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্যদের আবাস্থল, তা অনেক আগেই সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি ত্রিপুরার বিজেপি সরকার ঠিক করে, রাজকীয় এই স্থাপত্য়টির চরিত্র বদলে সেটিকে একটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নানা মহলে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। তার জেরেই উপরোক্ত দাবিটি করেছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী।
সুশান্ত চৌধুরীর দাবি, ১৯৪৯ সালে পূর্বতন ত্রিপুরা রাজ্য যখন ভারতের অন্তর্গত হয়েছিল, সেই সময়েই এই প্রাসাদের মালিকানা সরকারের হাতে চলে আসে। তাই রাজ্য সরকারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এই সরকারি সম্পত্তি নিয়ে যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং তা বাস্তবায়িত করার।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ওই প্রাসাদটিকে হোটেলে রূপান্তরিত করা নিয়ে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। তবে, এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী বলেন, 'রাজ আমলে এই প্রাসাদ অবশ্যই রাজ পরিবারের সম্পত্তি ছিল। কিন্তু, এখন এটি সরকারি সম্পত্তি। কারণ, ত্রিপুরা রাজ্য ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই এখন সরকার এই প্রাসাদ নিয়ে যেকোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।'
তবে, সুশান্ত এও জানিয়েছেন, এই প্রাসাদ ভেঙে ফেলার কোনও পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নেই। কারণ, সম্প্রতি এটির সংস্কার করা হয়। যাতে প্রাসাদটি ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করতে পারে।
এদিকে, এই রাজ পরিবারেরই সন্তান তথা বর্তমান 'রাজা' হলেন প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মা। তিনি টিপরা মোথা পার্টিরও প্রতিষ্ঠাতা নেতা। রাজ্যের বিজেপি সরকার তাঁদের পরিবারের প্রাসাদে হোটেল বানাবে শুনে গর্জে উঠেছেন প্রদ্যোৎ।
তাঁর বক্তব্য, এমন কোনও পদক্ষেপ করার আগে রাজ্য সরকারের আরও ভালো করে ভাবা দরকার। তা না হলে ত্রিপুরার মানুষকেই প্রতিবাদে পথে নামতে হবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল - টিপরা মোথা কিন্তু রাজ্য়ের প্রধান শাসকদল বিজেপিরই জোটসঙ্গী!
তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন টিপরা মোথার নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। দলের ছাত্র সংগঠনের তরফে থেকেও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্যের বিজেপি সরকার ত্রিপুরার ইতিহাস ও সংস্কৃতি মুছে ফেলার অপচেষ্টা করছে।
এর পালটা রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রীর যুক্তি হল, রাজ পরিবারের কিছু সম্পত্তিতে তো বিয়ের অনুষ্ঠানও হচ্ছে। তাহলে হোটেল হবে না কেন?
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ পরিবারের এই প্রাসাদটিই রাজ্যের গভর্নর হাউস হিসাবে ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে, বিজেপি সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই প্রাসাদে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হবে। এখান সেখানেই হোটেল করার কথা ভাবা হচ্ছে।