সোমবার মিশরের শর্ম-আল-শেখে রয়েছে ‘শান্তি সম্মেলন।' সেখানেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব মতো, গাজায় শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে ইজরায়েল ও হামাসের। আর সেই ‘শান্তি সম্মেলন’-এ উপস্থিত থাকার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতেহ আল-সিসি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
সোমবার এই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন না। তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং। এই খবর নিশ্চিত করেছে বিদেশ মন্ত্রক। আগামিকাল বিকেলে শার্ম আল-শেখে আবদেল ফাতাহ আল-সিসি এবং ট্রাম্পের যৌথ সভাপতিত্বে ‘শান্তি শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতেহ আল-সিসির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ-সহ ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। বস্তুত, সাম্প্রতিক শুল্ক যুদ্ধ এবং এইচ১-বি ভিসার সমস্যা জট বাড়িয়েছে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে। এরপরেও, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কায়রোয় গাজা শান্তি সম্মেলনে উপস্থিত আমন্ত্রণ জানানোয় স্পষ্ট হল- মধ্য প্রাচ্য এবং ওয়াশিংটনের কাছে ভারতের গুরুত্বের বিষয়টি।
আরও পড়ুন-সীমান্তে প্রতিশোধের আগুন! আফগান বাহিনীর পাল্টা মারে নিহত ৬৫ পাক সেনা, দখল ২৫ আউটপোস্ট
মধ্য প্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করাই শান্তি সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পর এটি শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইতিমধ্যেই ইজরায়েল আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে, যার ফলে প্যালেস্তাইনের বহু বাস্তুহারা পরিবার ধ্বংসস্তূপে ফিরতে পেরেছে। তবে শান্তি সম্মেলনের চ্যালেঞ্জও কম নয়। হামাস ঘোষণা করেছে, তারা শান্তি চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না। ট্রাম্পের পরিকল্পনার বেশ কিছু ধারা, বিশেষত নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে, তাদের আপত্তি রয়েছে। হামাসের এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, 'গাজাবাসীদের স্থানান্তর প্রস্তাব হাস্যকর ও গ্রহণযোগ্য নয়।' ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর ইজরায়েলি প্রতিশোধে যে বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম শান্তির আভাস এনেছে। শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইজরায়েল ২৫০ জন বন্দি এবং ১,৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। বিনিময়ে হামাস ছেড়ে দেবে ৪৭ জন ইজরায়েলি বন্দিকে। এই চুক্তি কার্যকর করতে একটি বহুজাতিক নিরাপত্তা টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই দলে যুক্ত থাকবে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।
আরও পড়ুন-সীমান্তে প্রতিশোধের আগুন! আফগান বাহিনীর পাল্টা মারে নিহত ৬৫ পাক সেনা, দখল ২৫ আউটপোস্ট
বিশ্লেষকদের মতে, গাজা প্রশ্নে স্থায়ী শান্তি এখনও অনিশ্চিত। নিরস্ত্রীকরণ, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে মতবিরোধ অব্যাহত। তবু এই সম্মেলন মধ্য প্রাচ্যের ইতিহাসে শান্তির পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে আশা আন্তর্জাতিক মহলের। উল্লেখ্য, এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব মেনে গাজায় শান্তি চুক্তির প্রস্তাবে ইজরায়েল ও হামাস রাজি হওয়ায় ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফোনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেও শুভেচ্ছাও জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।