ব্যবসায়িক লাভের জন্যে বিদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া আমেরিকানদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের আইনি পদক্ষেপ স্থগিত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মর্মে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট (এফসিপিএ) প্রয়োগ স্থগিত হওয়ার আবহে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে এই আইন সম্পর্কিত বর্তমান এবং অতীত কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। এদিকে এফসিপিএ-র অধীনে বিচার বন্ধ করার ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে গৌতম আদানি মামলার ওপর কি প্রভাব ফেলবে? রিপোর্ট অনুযায়ী, এই নির্দেশিকার পরিধি এবং প্রয়োগের উপর নির্ভর করে আদানি মামলার ক্ষেত্রে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে। মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্প এই আইনের অধীনে বিচার স্থগিত করার সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যে কোনও চলমান বা সম্ভাব্য তদন্ত বিলম্বিত হতে পারে। (আরও পড়ুন: মার্কিন সফরের আগে প্যারিসে VP ভান্সের সঙ্গে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী)
আরও পড়ুন: ১ লাখ কোটি টাকার চুক্তি প্রায় পাকা, ফ্রান্স থেকে ২৬ রাফাল ছাড়াও ভারতে আসবে…
এর আগে আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের তদন্তকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন সেই দেশের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য লান্স গুডেন। এই আবহে তৎকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডকে চিঠি পাঠান লান্স। এর আগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে একই সঙ্গে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট জজ নিকোলাস জি গারাফিস। উল্লেখ্য, আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি সহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল ঘুষ কাণ্ডে। তার মধ্যে মার্কিন মুলুকে মামলায় তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে গৌতম আদানি, সাগর আদানিদের বিরুদ্ধে। (আরও পড়ুন: মহাকুম্ভগামী ট্রেনে উঠতে না পেরে এসি কামরার জানলার কাচ ভাঙলেন বিহারে ভক্তরা)
মামলার প্রেক্ষিতে অভিযোগ, বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে অন্ধ্রপ্রদেশ সহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল আদানি গ্রিন এনার্জিস। এই সংক্রান্ত তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমেরিকার ন্যায়বিচার দফতর এবং বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ফৌজদারি এবং দেওয়ানি আইনের আওতায় মামলা করে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফরেন কোরাপ্ট প্র্যাক্টিসেস আ্যাক্টে মামলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতারণার মামলাও হয়েছে। এর পাশাপাশি শেয়ার এবং ঋণপত্রে টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগেও দেওয়ানি মামলা হয়েছে আদানি গ্রিনের বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, ভারতের সরকারি আধিকারিকদের ২৬.৫ কোটি ডলারের ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আদানি এবং আজিউর পাওয়ার গ্লোবাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে। রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা এবং কর্মকর্তাদের ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ এবং মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। তবে আদানি গোষ্ঠী নিজেদের ফাইলিংয়ে দাবি করেছিল, ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গৌতম আদানির নাম নেই। সেই অভিযোগে অভিযুক্ত আজিউর পাওয়ার গ্লোবাল লিমিটেডের এক কর্তা এবং এক কানাডিয়ান বিনিয়োগকারী।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আদানি নাকি ভারতীয় আধিকারিকদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৬.৫ কোটির ডলারেরও বেশি ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে সৌরশক্তি সরবরাহের লাভজনক চুক্তি পেয়েছিল আদানি। এই চুক্তিগুলো থেকে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা অর্জনের আশা করা হয়। যদিও এই সব অভিযোগই অস্বীকার করে আদানি গোষ্ঠী। আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতীয় আধিকারিকদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল তারা। এরই মাধ্যমে আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে তারা টাকা তুলেছিল বাজার থেকে। দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালের জুলাই এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আদানি গোষ্ঠী।