সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার (সেবি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ করা হল অর্থ সচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডেকে। ১৯৮৭ ব্যাচের আইএএস অফিসার তুহিন এর আগে অর্থ সচিব এবং রাজস্ব বিভাগের সচিব পদি দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। উল্লেখ্য, সেবি চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১ মার্চ। তিনি ২০২২ সালের ২ মার্চ প্রথম মহিলা হিসেবে সেবির শীর্ষ পদে আসীন হয়েছিলেন।
মাধবী পুরী বুচের পরিবর্তে সেবির নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পান্ডে কে?
তুহিন চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ এবং যুক্তরাজ্য থেকে এমবিএ করেছেন। তিনি ওড়িশা রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভূমিকা পালন করেছেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের অর্থ সচিব হন তুহিন। তার আগে তিনি পান্ডে একাধিক বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তুহিন কান্ত পাণ্ডে অর্থ সচিব থাকাকালীন ভারতের আর্থিক ও অর্থনৈতিক নীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন এবং সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সামনে মন্ত্রকের কার্যক্রমের খতিয়ান উপস্থাপন করেছিলেন।
তার আগে তুহিন ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস (ডিপিই), পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট এবং ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (ডিআইপিএএম)-এর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে থেকে ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল।
মাধবী পুরী বুচকে নিয়ে 'বিতর্ক'
সেবি প্রধান মাধবী বুচকে নিয়ে বিগত দিনে বহু চর্চা হয়েছে। হিন্ডেবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে তাঁকে নিয়ে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছিল। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আদানিদের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিলেন সেবি প্রধান এবং তাঁর স্বামী। এরপরই শুরু হয় তোলপাড়। এই অভিযোগ সামনে আসতেই প্রাথমিক ভাবে তা খারিজ করে দিয়েছিলেন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচ।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, সেবি প্রধান মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামীর অংশিদারিত্ব রয়ছে বারমুডা ও মরিশাসের অখ্যাত অফশোর ফান্ডে। আদানিদের সঙ্গে সেই ফান্ডের যোগ আছে। ২০১৭ সালে মাধবী সেবির পূর্ণ সদস্য হওয়ার আগে নাকি তাঁর স্বামী এই বিনিয়োগ পুরোপুরি নিজের নামে করার আবেদন জানিয়েছিলেন। যাতে মাধবীর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত না হয়। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, একটি মাল্টিলেয়ার অফশোর স্ট্রাকচারের মাধ্যমে এই বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই আবহে বিনিয়োগের বৈধতা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা। হিন্ডেনবার্গ দাবি করে, সেবি প্রধান মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামীর অংশিদারিত্ব রয়ছে বারমুডা ও মরিশাসের অখ্যাত অফশোর ফান্ডে। এই বিনিয়োগ নাকি অঘোষিত। ২০১৫ সালে এই বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এদিকে ২০১৭ সালে মাধবী সেবির পূর্ণ সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে সেবির চেয়ারপার্সন হিসাবে তাঁর পদোন্নতি হয়।
পরে বুচ দম্পতি স্পষ্ট করেন, 'হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে উল্লেখিত সেই ফান্ডে ২০১৫ সালে তাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন। মাধবী সেবির সদস্য হওয়ার ২ বছর আগের কথা সেটা। তখন তাঁর সিঙ্গাপুরে থাকতেন। এদিকে মাধবীরা দাবি করেছিলেন, তখন সেই ফান্ডের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ছিলেন অনিল অহুজা। তিনি ধবলের ছোটেলার বন্ধু ছিলেন। অনিল অহুজা সিটি ব্যাঙ্ক, জেপি মর্গ্যান, ৩আই গ্রুপের মতো বিভিন্ন বড় বড় সংস্থায় কয়েক দশক ধরে কাজ করে এসেছেন। তাই তাঁরা সেই ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিলেন। এদিকে অনিল অহুজা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা এই ফান্ডের থেকে কোনওদিন বন্ড, শেয়ার বা ডেরিভেটিভের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর কোনও শেয়ারেই বিনিয়োগ করেনি।