সংবিধানের ৩৯(বি) ধারা প্রসঙ্গে বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার যে মতামত প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তার সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় যে রায় দিয়েছেন, তার বিরোধিতা করলেন বিচারপতি বি ভি নাগারত্না এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া।
বিচারপতি নাগারত্না এই প্রসঙ্গে বলেছেন, বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য 'অযৌক্তিক'। আর বিচারপতি ধুলিয়া মনে করেন, প্রধান বিচারপতির মন্তব্য 'কঠোর'। যা 'না বললেও হতো'!
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ন'জন সদস্য হলেন - প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হৃষিকেশ রায়, বিচারপতি বি ভি নাগারত্না, বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রা, বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সামনে যে মামলাটি বিচারের জন্য পেশ করা হয়েছিল, তাতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দেশ, সমাজ বা গোষ্ঠীর কল্যাণের নামে, অর্থাৎ - বৃহত্তর স্বার্থে সরকার কি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যে কোনও সম্পত্তি চাইলেই অধিগ্রহণ করতে পারে? সংবিধানের ৩৯(বি) ধারা অনুসারে, সঠিক পদক্ষেপ কী?
এই মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যে রায় দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, সরকার চাইলেই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমস্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে না। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সেই রায়ই নথিভুক্ত করান।
যদিও বিচারপতি নারারত্না বেঞ্চের এই সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন না। তাঁর মতে, ব্যক্তিগত হোক কিংবা সরকারি, বৃহত্তর গোষ্ঠীর স্বার্থে সব সম্পত্তিই সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে।
এর পাশাপাশি, বিচারপতি আইয়ার সম্পর্কে বর্তমান প্রধান বিচারপতি যে মন্তব্য করেন, তারও বিরোধিতা করে নিজের মতামত ও বক্তব্য রেকর্ড করান বিচারপতি নারারত্না।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারের শুনানি ও রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, ৩৯(বি) ধারা সংক্রান্ত পুরোনো মামলা ও তার রায় উল্লেখ করে, বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার এবং বিচারপতি চিন্নাপ্পা রেড্ডি সম্পর্কে মন্তব্য করেন, অতীতে ওই দুই বিচারপতিই একটি 'নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক আদর্শে' উদ্বুদ্ধ ছিলেন।
কিন্তু, বিচারপতি নাগারত্না এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর মতে, সংশ্লিষ্ট ধারা সংক্রান্ত পুরোনো মামলাটির রায় ঘোষণা করার সময়, বিচারের দায়িত্বে থাকা উপরোক্ত দুই বিচারপতিই বারবার সংবিধান প্রণেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করেছেন এবং সেই অনুসারেই রায় দান করেছেন।
এই প্রসঙ্গে বিচারপতি নাগারত্না বলেন, '...অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করা এই আদালতের কাজ নয়। বরং একটি অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য সংবিধান প্রণেতাদের উদ্দেশ্য সহজতর করাই এই আদালতের দায়িত্ব।
বিচারপতি নাগারত্নার মতে, বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার যে রায় দিয়েছিলেন, তা অবশ্যই তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার করেই দিয়েছিলেন।
বিচারপতি নাগারত্না তাঁর বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চান, অতীতে কোনও বিচারপতি যদি নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তাহলে কি তার জন্য তাঁদের এভাবে অভিযুক্ত করা যেতে পারে! তাই তিনি প্রধান বিচারপতির সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকে 'অযৌক্তিক' বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, বিচারপতি ধুলিয়াও, বিচারপতি আইয়ার ও বিচারপতি রেড্ডির অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন।
তিনি বলেন, 'যেকোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে, বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ারের মতবাদ সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে, আমি তার বিরুদ্ধে আমার তীব্র অসন্তোষ এখানে লিপিবদ্ধ করছি। এই সমালোচনার ভাষা অত্যন্ত কঠোর এবং তা এড়ানো যেত।'