একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল পরপর দু'দিন। পশ্চিম রেলের চালকদের তৎপরতায় ট্রেনে কাটা পড়ার হাত থেকে বেঁচে গেল মোট আটটি সিংহ! রবিবার পশ্চিম রেলের ভাবনগর ডিভিশনের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একথা জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এই এলাকার বন্যপ্রাণ রক্ষা করতে ভাবনগর ডিভিশনের পক্ষ থেকে কঠোর নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। বিশেষ করে কোনও সিংহ যাতে রেললাইনে উঠে পড়ে, বা লাইন পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার না হয়, সেই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ট্রেন চালকদের সেই সংক্রান্ত সমস্ত নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। যার মধ্য়ে অন্যতম হল - ওই এলাকা দিয়ে ট্রেন চালানোর সময় ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি নিয়ন্ত্রণ করা, লাইনের উপর নজরদারি চালানো ইত্য়াদি।
অন্যদিকে, যেকোনও ধরনের মর্মান্তিক সংঘাত বা দুর্ঘটনা রুখতে এই এলাকায় বনকর্মীরাও সচেতন থাকেন। তাঁরা নিয়মিত রেললাইনে নজর রাখেন। যাতে কোনও সিংহ বা অন্য কোনও বন্যপ্রাণী ট্রেন চলাচলের সময় লাইনে উঠে না পড়ে, বা তার কাছে না চলে আসে।
রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই যৌথ প্রয়াসের ফলে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ১০৪টি সিংহের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
রবিবারের ঘটনাও তার অন্যতম। লোকো পাইলট ধবল পি ট্রেন চালানোর সময় হঠাৎই লক্ষ করেন, সামনেই লাইনের উপর পাঁচটি সিংহ ঘোরাফেরা করছে! তারা লাইন পেরিয়ে এদিক-ওদিক যাচ্ছে।
ধবল সেই সময় হাপ্পা-পিপাভব পোর্ট মালগাড়িটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। লাইনে সিংহ দেখেই তিনি এমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করেন। এবং গার্ড লোকেশ শাহকে গোটা ঘটনা জানান।
রেলের তরফে বন বিভাগকেও এই ঘটনা জানানো হয়। খবর পেয়েই তাদের কর্মী ও আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। বনকর্মীরা যখন নিশ্চিতভাবে জানান, সিংহের ওই দলটি রেললাইন থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে গিয়েছে, তারপরই ফের যাত্রা শুরু করেন ধবল।
এর আগে শনিবারও প্রায় একই ঘটনা ঘটে। লোকো পাইলট সুনীল পণ্ডিত হঠাৎই দেখেন রেললাইনেই দৌড়ে, ছুটে, খেলে বেড়াচ্ছে পুঁচকে দুই সিংহ শাবক! সঙ্গে রয়েছে তাদের মা - পূর্ণবয়স্ক এক সিংহী। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন থামিয়ে দেন সুনীল। ঘটনাটি ঘটে চালালা-ধারি সেকশনে।
সেই সময় আমরেলি-বেরাবল প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিয়ে যাচ্ছিলেন সুনীল। তিনি জুনাগড়ে ট্রেন ম্যানেজারকে বিষয় জানান। সেখান থেকে বন দফতরেও খবর যায়। এরপর বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিংহী ও তার দুই শাবকের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিশ্চিত করার পরই ট্রেনটি ফের সেখান থেকে রওনা দেয়।
দুই লোকো পাইলটের এই সচেতনতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রেল দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তারা।